নিমাই খুনে ধৃত তিন দলীয় কর্মীই

ওই খুনের প্রত্যক্ষদর্শী সিরাপ আলি  পুলিশকে বলেন, ‘‘আমরা চার-পাঁচ জন মিলে কথা বলছিলাম। জনা পাচেক লোক কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে পার্টি অফিসে ঢুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নওদা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৭
Share:

শোকস্তব্ধ স্বজনেরা। (ইনসেটে) নিহত নিমাই মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র

নিমাই মণ্ডল খুনের পরেই বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলেছিলেন তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি আবু তাহের। তবে, তদন্তে নেমে বারো ঘণ্টার মধ্যেই যে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ তারা সকলেই তৃণমূলের। ধৃত খোদা হাফেজ শেখ, জিয়ারুল শেখ ও সুজাত আলি শেখ এলাকায় সক্রিয় তৃণমমূ কর্মী বলেই পরিচিত। সোমবার রাতে, নওদার বালি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তথা দলের অঞ্চল সভাপতি নিমাই মণ্ডল (৫৫) খুনের পরেই তাঁর ভাই বাপি আট জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছিলেন।

Advertisement

ওই খুনের প্রত্যক্ষদর্শী সিরাপ আলি পুলিশকে বলেন, ‘‘আমরা চার-পাঁচ জন মিলে কথা বলছিলাম। জনা পাচেক লোক কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে পার্টি অফিসে ঢুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে।’’ ঘটনাস্থলেই মারা যান পেশায় শিক্ষক নিমাই মণ্ডল। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ইসরাইল সেখ নামে এক পঞ্চায়েত সদস্য। মৃতের স্ত্রী অপর্ণা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার স্বামী বেঁচে থাকলে বড় অসুবিধা হচ্ছিল ওদের। পঞ্চায়েতে লুটেপুটে খেতে পারছিল না। তাই ওঁকে সরিয়ে দিল।’’ মৃতের মেয়ে শাঁওলী বলেন, ‘‘এখানে বিরোধী বলতে কেউ নেই। দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই বাবাকে খুন হতে হল।’’

এলাকায় নিমাইবাবু যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। সিপিএমের পুরনো নেতা নিমাই পরে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। দলের একাধিক পদেও ছিলেন তিনি। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, ‘‘নিমাই মাস্টারের নেতৃত্বে এলাকায় দল শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম একজোট হয়ে ভাবে তাকে খুন করেছে।’’ তা হলে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মীদের ধরতে হল কেন? তিনি অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘‘দলের প্রধান নির্বাচনের সময় থেকেই নেতা কর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ চলছিল।’’

Advertisement

একই সুর শোনা গিয়েছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেনের মুখেও। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে বলা হয়েছে তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে। যে দলেরই হোক, খুনের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না।’’

তবে জেলা তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতার কথায় ইশারা থেকে ‘কোন্দলের’ গন্ধ পাচ্ছেন নওদার কংগ্রেস নেতা সুনীল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘তাহের ও মোশারফের কথা থেকেই স্পষ্ট এর পিছনে কোন্দলের ছাপ রয়েছে।’’ একই দাবি করছেন বিজেপির মন্ডল সভাপতি অনুপম মণ্ডলও। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি নিমাই মণ্ডলের উদ্যোগেই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করা হয়। তখন থেকেই একাধিক বার তাঁর বাড়িতে হামলার পাশাপাশি খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এমনই দাবি স্ত্রী অপর্ণার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন