সানাই বাজছে। বাড়িভর্তি আত্মীয়স্বজন। বৌভাতের অনুষ্ঠান চলছে। শোরগোল পড়ল হঠাৎই। গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছে নতুন বৌ।
শনিবার সকালে নদিয়ার ভীমপুরের পাকুড়গাছি স্কুলপাড়ার ঘটনা। নববধূকে উদ্ধার করে শনিবার দুপুরে শক্তিনগরে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তরুণীর শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে।
কিন্তু কেন এমন করলেন তিনি? হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডে শুয়েই তরুণী বলেন, ‘‘আমার অমতে বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিয়েছেন। তাই গায়ে আগুন দিয়েছি।’’ তরুণী জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে অন্য কারও সম্পর্ক নেই। তাঁর বিয়ের বয়স হয়নি, তা সত্ত্বেও বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিয়েছে বলেই এ কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু শুধু মাত্র এই কারনেই গায়ে আগুন না অন্য কোনও কারণও আছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। হাসপাতালের রেজিস্টারের তরুণীর বয়স লেখা হয়েছে ২১ বছর। সেটাও সত্যি, নাকি তিনি নাবালিকা, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তরুণীর বাপের বাড়ি মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর থানার রামনগর কুঠিপাড়ায়। বাবা বাসের হেল্পারের কাজ করেন। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে এই বড়। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিন বোনেরই পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ছোট ভাই দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে। দেখাশুনা করেই ভীমপুরে বিয়ে ঠিক হয়। শনিবার সকালে নতুন বৌ নিয়ে বাড়িতে এসেছিল ছেলে। তরুণীর সঙ্গে তাঁর দূর সম্পর্কের এক ঠাকুরমা ও মেজো বোনও পাকুড়গাছিতে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা পবনকুমার মণ্ডল বলছেন, সন্ধ্যায় বৌভাতের অনুষ্ঠান। ফলে বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজন। রাঁধুনিরা সবজি কাটা, মাছ ধোয়ার কাজ করছেন। প্যান্ডেলে চেয়ার-টেবিল সাজাতে ব্যস্ত লোকজন। এমন সময় আগুনের পোড়া গন্ধে ও আর্তনাদে কাজের তাল কাটে।
তরুণীর স্বামী বলেন, “আমি যখন ওকে প্রথম দেখতে গিয়েছিলাম তখন আলাদা ভাবে কথা বলেছিলাম। বিয়েতে অমত থাকলে আমাকে জানাতেও বলেছিলাম। কিন্তু তখন ও জানাল না কেন?”