কম জলে পাট পচানোর এক নতুন পদ্ধতি বার করেছেন বিজ্ঞানীরা। নদিয়ায় চাষিদের মধ্যে শুরু হচ্ছে তার ‘পাইলট প্রজেক্ট।’ ন্যাশনাল জুট বোর্ডের দাবি, চিরাচরিত ভাবে পাট পচাতে যেখানে ১৮-২০ দিন সময় লাগে, নতুন পদ্ধতিতে সেখানে লাগবে ১২-১৩ দিন।। পাটের গুণগত মান বাড়বে, বাড়বে পরিমাণও। রঙও হবে আরও বেশি সোনালি।
নতুন ওই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে ‘সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিউট ফর জুট অ্যান্ড অ্যালাইড ফাইবার।’ ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বি়জ্ঞানী বিজন মজুমদার বলেন, ‘‘যে ব্যাকটেরিয়া পাট পচাতে সাহায্য করে, আমরা প্রথম থেকেই জলে সেই ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছি। তাতে শুরু থেকেই পাট আরও দ্রুত পচতে শুরু করবে। তাই সময়ও কম লাগবে।’’ প্রচলিত পদ্ধতিতে বেশি দিন ধরে পাট জলে পড়ে থাকায় আগার দিকের নরম পাট পচে যায়। এক্ষেত্রে তা না হওয়ায় চাষিরা বেশি পাট পাবেন বলে দাবি তাঁর। বিজনবাবু জানান, ‘ব্যাসিলিয়াস পিউমিলাস’ নামে এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার তিনটি প্রজাতি পাট পচার জন্য দায়ী। সেই মতো ওই প্রজাতিগুলি নিয়ে একটি নির্দিষ্ট ফর্মুলায় পাউডারের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি ‘বায়ো ফার্টিলাইজার।’ নতুন পদ্ধতিতে বদ্ধ জলাশয়ে স্তরে স্তরে পাট সাজাতে হবে। আর প্রতিটি স্তরে ‘ক্রাইজাফ সোনা’ (crijaf sona) নামক ওই বায়ো ফার্টিলাইজার নির্দিষ্ট পরিমাণে ছড়িয়ে দিতে হবে। জাগ দিতে সার বা সিমেন্টের বস্তায় মাটি ভরে পাটগাছের উপর চাপাতে হবে। দ্রুত পাট পচবে বলে একই জলে বারেবারে পাট পচানো যাবে। পাট চাষ হয়ে গেলে ওই জল অন্য চাষের কাজে ব্যবহার করলে সারের কাজও করবে, দাবি বিজ্ঞানীদের।
প্রচলিত প্রথায় পাটের উপর সরাসরি মাটি জাগ হিসেবে চাপানোয় ‘ফেরাস টেনাট’ (ferrous tennate) নামে এক ধরণের যৌগের প্রভাবে পাটের রঙ কালো হয়ে যায়। তাই চাষিদের জাগ হিসেবে কলাগাছ বা মাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। তাতে পাটের রঙ আরও সোনালি হবে।
এবারই প্রথম নয়। এর আগেও পাট উৎপাদনকারী সাতটি রাজ্যের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষকদের পরীক্ষা মূলক ভাবে ওই বায়ো ফার্টিলাইজার দেওয়া হয়েছিল। তিন বছর ব্যবহার করার পরে গত বছর এই পদ্ধতিকে ‘জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশন’-এর আওতায় এনে পাইলট প্রজেক্ট চালু করেছে ন্যাশানাল জুট বোর্ড। তার জন্য নদিয়া জেলার করিমপুর-১ ও ২ ব্লক, এবং মুর্শিদাবাদের বহরমপুর ব্লককে বেছেছে। বোর্ডের সম্পাদক দীপঙ্কর মাহাতো বলেন, ‘‘দেশের মধ্যে এই এলাকাতেই পাট উৎপাদিত হয় সবচেয়ে বেশি। সেই কারণেই আমরা তিনটি ব্লককেই বেছে নিয়েছি। এখানে নতুন পদ্ধতি সফল হলে দেশের অন্যত্র ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’’
এ রাজ্যে গত বছর এই পদ্ধতিতে পাট পচিয়ে ছিলেন বর্ধমানের কাটোয়ার আকাইহাট এলাকার চাষি দিলীপ মন্ডল। মোট ৬ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন তিনি। তার মধ্যে এক বিঘার জমির পাট পচাতে তিনি ওই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তফাত কতটা? তাঁর কথায়, ‘‘নতুন পদ্ধতিতে পচানো পাটের গুণগত মান অনেক ভাল।’’ ফলে অন্য পাটের গ্রেড যেখানে ৫ হয়েছে সেখানে নতুন পদ্ধতিতে পচানো পাটের গ্রেড হয়েছে ৪। তাতে কুইন্টাল প্রতি দু’শো টাকা বেশি পেয়েছেন বলে জানান তিনি।