বিদ্যুৎ জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে। তাই সেই পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে অচলাবস্থার তৈরির আশঙ্কা উড়িয়ে দিলেন খোদ শ্রমিকেরাই।
শনিবার রঘুনাথগঞ্জে সাংবাদিক বৈঠক করে এনটিপিসি-র ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অরাজনৈতিক সংগঠন ‘শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি’। কমিটির সম্পাদক অমর চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এখন থেকে সব সমস্যা মেটানো হবে আলোচনার মাধ্যমে। ধর্মঘট বা কর্মবিরতি করে নয়।’’ শ্রমিক সংগঠনের এমন বোধোদয়ে স্বস্তিতে কর্তৃপক্ষও। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শৈবাল ঘোষ বলেন, ‘‘ফরাক্কায় বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। কর্মীরাও কাজে এসেছেন।’’
এ দিন সব মহলে স্বস্তি ফিরলেও ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অচলাবস্থার আশঙ্কাটা ছিলই। কেমন? গত শুক্রবার রাতে শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক অমর চক্রবর্তী-সহ চার নেতা আনোয়ার কবীর, বদরুদ্দিন শেখ ও মহম্মদ তাজাহান আলিকে গ্রেফতার করে ফরাক্কা থানার পুলিশ। তা জানাজানি হতে শনিবার সকালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়েক’শো ঠিকা শ্রমিক ফরাক্কা থানা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। শ্রমিক বিক্ষোভের আশঙ্কায় ধৃত চার নেতাকেই ফরাক্কা থানা থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পাশের সামশেরগঞ্জ থানায় রাখা হয়। শনিবার তাদের জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলায় শ্রমিক নেতারা নিজেরাই জামিনে মুক্তির জন্য সওয়াল করেন। সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক সাথী মুখোপাধ্যায় সপ্তাহে একদিন ফরাক্কা থানায় হাজিরার শর্তে চার জনকেই ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেন।
গত ২৬ মে এনটিপিসি-র পূবারুণ আবাসনে কাজ করার সময়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু ঘিরে শ্রমিক-এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। ঠিকা শ্রমিকেরা কমিটি তৈরি করে মৃত শ্রমিকের পরিবারের চাকরি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে দেহ আটকে রেখে লাগাতার বিক্ষোভে নেমেছিলেন। তার জেরে কেন্দ্রের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। পরে বিডিও ও ফরাক্কা থানার আইসি-র মধ্যস্থতায় শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয় এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ। ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি মৃতের পরিবারের একজনকে চাকরির আশ্বাসও দেয় এনটিপিসি।
ঘটনার পরদিনই বিক্ষোভে যুক্ত শ্রমিকদের ৭ জনের বিরুদ্ধে ফরাক্কা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মানব সম্পদ বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার জীতেন্দ্র কুমার। ৬ জুন ফরাক্কা থানায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ দায়ের হয়। কেন? এনটিপিসির এক পদস্থ কর্তার সাফাই, বিক্ষোভের পর থেকেই প্ল্যান্টের মধ্যে কাজে অসহযোগিতা করছেন ঠিকা শ্রমিকেরা। অফিসারদের সঙ্গে অশালীন আচারণও শুরু করে। সমস্ত ঘটনা জানিয়ে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারকে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠায়। এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে চার শ্রমিক নেতা গ্রেফতার হন। ফের শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়।
তবে শনিবারই শ্রমিক নেতাদের জামিন মেলায় স্বস্তি ফিরেছে।