হারানো গরম ৬

গাছতলা গায়েব, কার্নিশের ছায়া

কান্দি-কর্ণসুবর্ণ রাজ্য সড়ক ছেড়ে ডান হাতে মাটির রাস্তা ধরে কিছুটা ভিতরে গেলেই মাস্টারদের বাড়ি। খোলামেলা বাড়ির দক্ষিণ দিকে আকাশছাওয়া নিমগাছ। নিচে প্রকাণ্ড মাচা।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০২:১৩
Share:

গাছতলা: কৃষ্ণনগর স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

কান্দি-কর্ণসুবর্ণ রাজ্য সড়ক ছেড়ে ডান হাতে মাটির রাস্তা ধরে কিছুটা ভিতরে গেলেই মাস্টারদের বাড়ি। খোলামেলা বাড়ির দক্ষিণ দিকে আকাশছাওয়া নিমগাছ। নিচে প্রকাণ্ড মাচা। গরমের সন্ধ্যা নামতেই কাঁধে গামছা ফেলে গোটা গাঁয়ের লোক জুটত ওই মাচায়। কেউ এক জন হেঁকে উঠত ‘মাস্টার রেডিওটা ছাড়ো দিকি’।

Advertisement

অমনি গমগমে গলায় দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলে উঠতেন “আকাশবানী কলকাতা, খবর পড়ছি...।” তখন মুক্তিযুদ্ধের সময়। তাই নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই মাস্টারবাড়ির নিমতলায়। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাপ থেকে পারিবারিক কলহের খুঁটিনাটি কিংবা গ্রাম্য দলাদলি, তখন সবই নখদর্পণে রাখত নিমতলা। সকাল গড়িয়ে দুপুর। ওই গাছতলায় গামছা বিছিয়ে একঘুমে কাবার করা রাত এখনও অনেক প্রবীণের স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে।

যদিও বাস্তব হল নিমগাছটা কাটা পড়েছে। জবরদখলের ভয়ে গাছ লাগোয়া ছড়ানো মাঠ উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘিরে নিয়েছে মালিক। গরমের দুপুরে তেমন নিবিড় ছায়া গোটা গ্রামে আর কোথাও মেলে না। তাই বৃহস্পতিবার সকালে ডোমকলের মাঠে ক্রিকেটে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ খেলতে এসে লালবাগ এবং করিমপুর দু’টি দলই ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছায়া খুঁজতে। ট্রফির থেকেও যেন জরুরী ছায়া দখল। খেলা শুরু হতেই দেখা গেল দর্শকরাও বেছে বেছে মাঠ লাগোয়া গাছতলাতেই জড়ো হয়েছেন। কিন্তু গাছই তো চোখে পড়ছে না।

Advertisement

উন্নয়নের জোয়ারে বট-বকুল-নিমের ছায়া দ্রুত সরে যাচ্ছে গ্রামের উপর থেকে। শহরকে ছায়া যোগাচ্ছে বহুতল। অথচ জাম-জারুলের ছায়ায় বসেই মিথিলার কাছ থেকে ন্যায়চর্চার একাধিপত্য ছিনিয়ে নিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নবদ্বীপ অর্জন করেছিল নব্যন্যায়ের উজ্জ্বল উত্তরাধিকার। চৈতন্যদেব থেকে বুনোরামনাথ। বট থেকে তেঁতুল। নবদ্বীপের সঙ্গে গাছতলার সম্পর্ক ঐতিহাসিক।

তেহট্ট করিমপুর জলঙ্গি ডোমকলের মতো অঞ্চলে ভোট এলেই তাই দাম বাড়ে গাছতলার। সবচেয়ে জরুরী হয়ে ওঠে ছায়া দখল। ছায়াবাজির উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে প্রশাসনকে হস্তক্ষেপও করতে হয়।

হবেই তো, প্রয়োজনের তুলনায় গাছতলা যে কম পড়িয়াছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement