মর্গের গন্ধে নাজেহাল বহরমপুর

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক দেবাশিস চক্রবর্তী বললেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, পুরনো মর্গের অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। দুর্গন্ধের জন্য ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করাই প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। অনেকটা ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাই।’’

Advertisement

প্রাণময় ব্রহ্মচারী

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩৪
Share:

হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস তখন সবে বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে ঢুকেছে। পিলপিল করে যাত্রীরা বেরোচ্ছেন। তাঁদের কেউ টোটোয়, কেউ বা হেঁটে বাড়ির পথ ধরেছেন। পুরনো মর্গের সামনে পৌঁছে সকলেই নাকে রুমাল দিলেন। এক অটোওয়ালার উদ্দেশে বৃদ্ধা যাত্রীকে বলতে শোনা গেল, ‘‘বাবা, তাড়াতাড়ি এই জায়গাটা পেরোও। নয় তো অসুস্থ হয়ে পড়ব।’’

Advertisement

বাস্তবিকই। পুরনো মর্গের সামনে দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম হচ্ছে পথচারীদের। সাকিলা বিবি নামে ওই বৃদ্ধা বললেন, ‘‘রোজ এত মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কি তা-ও নজরে পড়ে না!’’ ওই মর্গের উল্টোদিকেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মর্গ তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ওই মর্গের সামনে আত্মীয়ের দেহ নিতে অপেক্ষা করছিলেন বঙ্কিম ভট্টাচার্য। তিনি বললেন, ‘‘কত সুন্দর ব্যবস্থা নতুন মর্গে। আর উল্টোদিকে তাকিয়ে দেখুন। নোংরা, পুতিগন্ধময় পরিবেশ। কয়েক মিনিট দাঁড়ালে অসুস্থ
হয়ে পড়বেন।’’

হাসপাতালে কারও মৃত্যু হলে মৃতের ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা, পুরনো মর্গের সামনে ডাঁই করে ফেলে দেওয়া হয় পুরনো মর্গের সামনে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মৃতের আত্মীয় কিংবা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাই সেগুলি ওই জায়গায় ফেলেন। ফলে ওই এলাকাটি আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে। তা থেকেই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত করছে। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক দেবাশিস চক্রবর্তী বললেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, পুরনো মর্গের অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। দুর্গন্ধের জন্য ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করাই প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। অনেকটা ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাই।’’

Advertisement

তবে টোটো, অটো, ভ্যান, রিকশ চালকদের তা করার উপায় নেই। পরিমল নাথ নামে এক টোটোচালক এদিন বলছিলেন, ‘‘আমাদেরও তো অসুবিধা হয়। কিন্তু কী করব বলুন! রুজির টানে পুরনো মর্গের সামনের রাস্তা দিয়ে বারবার যাতায়াত করতে হয়। মর্গের সামনের রাস্তাটুকু নিঃশ্বাস বন্ধ করে পার হয়ে যাই।’’

পুরনো মর্গ সংস্কারের দাবিতে মাসকয়েক আগে মহকুমাশাসকের কাছে দরবার করেছিলেন বহরমপুর স্টেশন চত্বরের টোটোচালকেরা। কয়েকশো এলাকাবাসীর সই করা চিঠি সেই সময় মহকুমাশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ।

এ নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তথা সহকারী অধ্যক্ষ দেবদাস সাহা বললেন, ‘‘ওই মর্গ তো অনেকদিন আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর নতুন মর্গে দাবিদারহীন মৃতদেহগুলি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। তবুও পুরনো মর্গ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন