Cyber fraud

চুরি করতে ধরা পড়ে বন্ধুর মাকে খুন! শিক্ষককে জেরা করে ভুয়ো অ্যাপে কোটি টাকা প্রতারণার হদিস

বিপুল লাভের লোভে পড়ে ধার করে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন এক শিক্ষক। কিন্তু আচমকাই টাকা তোলার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায় অ্যাপে। সর্বস্ব হারিয়ে বন্ধুর বাড়িতে চুরি করার পরিকল্পনা করেন শিক্ষক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৬
Share:

প্রতীকী চিত্র। — গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বিপুল লাভের লোভে টাকা ধার করে বিনিয়োগ করেছিলেন মোবাইল অ্যাপে। লাভ তো দূর অস্ত, রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায় অ্যাপটিই। অন্য দিকে, টাকা ফেরাতে বাড়িতে নিত্য হানা দিচ্ছিলেন মহাজন। চাপে পড়ে সহকর্মীর বাড়িতে চুরি করতে যান পেশায় শিক্ষক মুর্শিদাবাদের ওই বাসিন্দা। বমাল সহকর্মীর মায়ের হাতে ধরাও পড়ে যান, প্রমাণ মেটাতে তাই বন্ধুর মাকেই খুন করে বসেন শিক্ষক। চুরি এবং বন্ধুর মাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ওই শিক্ষক। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতেই চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। জানা যায়, শুধু এই শিক্ষকই নয়, শুধু মুর্শিদাবাদ জেলাতে ভুয়ো ট্রেডিং অ্যাপের ফাঁদে পড়ে টাকা খুইয়েছেন বহু মানুষ। তদন্তকারীদের অনুমান, টাকার অঙ্ক কয়েক কোটি! ইতিমধ্যেই সেই সংক্রান্ত তথ্য সাইবার অপরাধের তদন্তকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, অনলাইনে ভুয়ো অ্যাপ তৈরি করে বিভিন্ন সামাজমাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার যুবকদের বেছে বেছে দেওয়া হত বিনিয়োগের প্রস্তাব। শুরুর দিকে বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেওয়া হত পাঁচ থেকে দশ গুণ টাকা। এ ভাবে বিনিয়োগকারী যুবকদের ভরসা জিতে নিয়েছিলেন প্রতারকেরা। অল্প বিনিয়োগে বিপুল মুনাফার সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বহু মানুষ একসঙ্গে বিনিয়োগ করতে থাকেন কোটি কোটি টাকা। তার পরেই ‘কাহানি মে ট্যুইস্ট’! এককালীন মোটা অর্থের বিনিয়োগ হলেই বন্ধ করে দেওয়া হত ‘উইথড্রয়াল সিস্টেম’। অর্থাৎ, গচ্ছিত টাকা আর তুলতে পারবেন না গ্রাহক। বছরখানেক ধরে এমনই সব ভুয়ো অ্যাপের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সীমান্ত এলাকার বহু যুবক।

সাইবার বিশেষজ্ঞ রত্নদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শেয়ার মার্কেট সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলেও অধিক মুনাফার লোভে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির রাস্তা বেছে নিচ্ছেন। সাইবার জালিয়াতদের এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে টার্গেট কম শিক্ষিত গ্রামীণ যুবকেরা।’’

Advertisement

মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া রুকুনপুর গ্রামের বাসিন্দা, রাহুল মণ্ডল একই ভাবে প্রতারিত হয়েছেন। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘প্রথমে ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে ২৫০০ টাকা পেয়েছিলাম। ৫০০০ টাকার দিয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে আসে। অ্যাপ শেয়ার করলে ৫০০ টাকা বোনাস পাওয়া যেত। এ ভাবে আমি প্রায় ৫০ জনকে জয়েন করিয়ে ২৫ হাজার টাকার কাছাকাছি আয় করেছিলাম। সে সব টাকা এবং নিজের জমানো টাকা মিলিয়ে যে দিন এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি, তার পরের দিনই টাকা তোলার অপশন বন্ধ হয়ে যায়। আমি নিজেও জানতাম না। বেশ কয়েক বার ভাল টাকা ফেরত পেয়ে লোভে পড়ে যাই। বুঝতে পারছি, কী ভাবে ঠকেছি। নিজের টাকা তো গেছে, যাঁদের অ্যাপ ডাউনলোড করিয়েছিলাম, তাঁরাও বাড়িতে এসে গোলমাল করছে।’’

তদন্ত চলাকালীন এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ-প্রশাসন। তবে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব জানিয়েছেন, রানিনগরের অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে খুনের কারণ অনুসন্ধানে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত চলছে।

প্রসঙ্গত, সহকর্মীর বাড়িতে গহনা চুরির চেষ্টা করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বাধার মুখে পড়েছিলেন মুর্শিদাবাদের রানিনগরের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক নুর সেলিম। চুরিতে বাধা পেয়ে সহকর্মী আবু সঈদের মাকে খুনের অভিযোগ ওঠে নুরের বিরুদ্ধে। ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত হন পরিবারের আরও তিন সদস্য। স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা আবুর মা রাজিয়া সুলতানাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আহতদের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঘটনার পরেই গ্রেফতার করা হয় নুরকে। আর তাঁকে জেরা করেই পুলিশ জানতে পারে আরও বড় প্রতারণার বিষয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন