ভিড়ে ঠাসা মাঠে বক্তব্য রাখছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
এই প্রথম তিনি নবদ্বীপে এলেন। তাঁকে দেখতে, তাঁর কথা শুনতে মাঠে উপচে পড়ল কয়েক হাজার মানুষের ভিড়। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে কখনও রাজ্যের উন্নয়নের কথা আবার কখনও পালা করে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে করে মুহুর্মূহু হাততালিও কুড়োলেন।
আসন্ন পুরভোটের প্রচারে শনিবার বিকেলে নবদ্বীপের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিশান ক্লাবের মাঠে তৃণমূলের জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন দলের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু তৃণমূলের দাপুটে নেতা শুভেন্দুবাবুর সভায় এ দিন ভিড় জমানো কয়েক হাজার মানুষের অধিকাংশই ছিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। শহরের ২৪টি ওয়ার্ড থেকে সুসজ্জিত মিছিল করে আসা দলীয় কর্মী সমর্থক ছাড়া সভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি খুব একটা নজরে পড়েনি।
এ দিন নবদ্বীপের সরকার পাড়ায় একটি মাঝারি মাপের মাঠে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। পুলিশের হিসাবে এ দিন সভায় সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো মানুষ এসেছিলেন। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি, হাজার আটেক লোক হয়েছিল। সভা শুরুর কথা ছিল বিকেল চারটে। তার অনেক আগে থেকেই নবদ্বীপের ২৪টি ওয়ার্ড থেকে পুরভোটের প্রার্থী এবং ওয়ার্ড সভাপতির নেতৃত্বে একে একে ২৪টি মিছিল মাঠে এসে পৌঁছয়। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ শুভেন্দু যখন সভাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন, তখনও মিছিল আসা শেষ হয়নি। শেষ মিছিলটি মাঠে পৌঁছয় শুভেন্দুর বক্তব্য চলাকালীন। ছোট-বড় নানা মাপের পতাকা, ব্যানার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল বিশাল কাট আউট, এমনকী ছোট গাড়িতে প্রায় ট্যাবলোর মতো করে সজিয়ে মিছিল এনেছিলেন একটি ওয়ার্ডের তৃণমূল সমর্থকেরা। মাঠের মাঝখানে রোদ থাকায় সভা শুরুর সময়েও ওই অংশ কিছুটা ফাঁকা ছিল। তবে রোদ কমতেই বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা কর্মী- সমর্থকদের মিছিলে সেই ফাঁকা অংশও ভরাট হতে শুরু করে। মাঠে প্রবল হাওয়া বইতে থাকায় তেমন গরমও ছিল না। সভায় সাধারণ মানুষের তেমন উপস্থিতি না দেখে তৃণমুল সমর্থকদের একাংশের বক্তব্য, শহরের এক কোনে মিটিংয়ের স্থান নির্বাচন করায় এবং ঠা ঠা রোদে বিকেল চারটে সভার সময় নির্ধারণ করায় সাধারণ মানুষ আসেননি।
এ দিন প্রথমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে সভার সুরটি বেঁধে দেন। নবদ্বীপে ‘চব্বিশে চব্বিশ’ করে পুরসভাকে বিরোধী শূন্য করার আহ্বান জানান তিনি। পরে বক্তব্য রাখতে উঠে শুভেন্দু রাজ্য জুড়ে গত চার বছরে তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদাহরণ-সহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফল নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, ‘‘কুৎসা পক্ষের চ্যানেল বলেছে কলকাতা পুরসভায় তৃণমূল ১০৩টে আসন পাবে। কিন্তু কলকাতা পুরসভায় আরও অনেক বেশি আসন পাবে দল। ২০১৬’র পরে সিপিএম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ডাইনোসরের মতো।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যদিও সিপিএম ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে, কিন্তু তাদের আর ভোট দেবেন না। আর লোকসভা ভোটের আগে দেওয়া ‘আচ্ছে দিনের’ প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ বিজেপি। কেজরিবাল দিল্লিতে ঝাঁটিয়ে তাড়িয়েছে বিজেপিকে। তাদের ভোট দেবেন না। আর কংগ্রেস ফুটো নৌকা। ওঁদের ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করবেন না।’’
এ দিন বড় জাগুলিয়া ও শান্তিপুরেও সভা করেন শুভেন্দু। দু’জায়গাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি।