সন্ত্রাসেই জয় শাসক দলের, মত বিরোধীদের

জয় এসেছে প্রত্যাশা মতোই। মসৃণ ভাবে। কিন্তু তৃণমূলের সেই জয়ের পিছনে রয়েছে সন্ত্রাস। এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। কল্যাণী মহকুমার তিনটি পুরসভাতেই শাসক দলের দাপটের কাছে কার্যত দাঁড়াতেই পারল না বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। কল্যাণী, গয়েশপুর ও হরিণঘাটা (এখানে প্রথম ভোট হল) পুরসভার ভোটের ফল প্রকাশে পরে রীতিমতো হতাশ বিরোধী শিবির। তিনটি পুরসভার একটি আসনেও জিততে পারেনি বিরোধীরা।

Advertisement

মনিরুল শেখ ও সৌমিত্র সিকদার

কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০১:৫০
Share:

জয় এসেছে প্রত্যাশা মতোই। মসৃণ ভাবে। কিন্তু তৃণমূলের সেই জয়ের পিছনে রয়েছে সন্ত্রাস। এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের।

Advertisement

কল্যাণী মহকুমার তিনটি পুরসভাতেই শাসক দলের দাপটের কাছে কার্যত দাঁড়াতেই পারল না বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। কল্যাণী, গয়েশপুর ও হরিণঘাটা (এখানে প্রথম ভোট হল) পুরসভার ভোটের ফল প্রকাশে পরে রীতিমতো হতাশ বিরোধী শিবির। তিনটি পুরসভার একটি আসনেও জিততে পারেনি বিরোধীরা।

কল্যাণী পুরসভায় ২১টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই জয়ী হয়েছে শাসক দলের প্রার্থীরা। একই অবস্থা হরিণঘাটা পুরসভাতেও। সেখানে এই প্রথম বার ভোট বল। হরিণঘাটা পুরসভার ১৭টি আসনই নিজেদের দখলে নিয়েছে তৃণমূল। ভোটের আগেই অবশ্য গয়েশপুরের ১৮ টি ওয়ার্ডের ১৭টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছিল তৃণমূল। একমাত্র ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেই ভোট হয়। ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল, সেখানে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোঁজ প্রার্থীকে হেলায় হারিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের অরুণকুমার ঘোষ।

Advertisement

মঙ্গলবার বেলা দশটা নাগাদ ফলাফল স্পষ্ট হতে থাকে। একে একে শাসক দলের প্রার্থীদের জয়ের খবর আসতে থাকে। বিরোধীদের কার্যত উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মেতে ওঠেন অকাল হোলিতে। অন্য দিকে, বিরোধী শিবিরের চেহারাটা ছিল একোবারেই উল্টো। একে একে পরাজয়ের খবর আসতে থাকায় বিরোধীরা গণনাকেন্দ্র ছাড়তে শুরু করে। গণনা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বাম-বিজেপির এজেন্টরাও বেরিয়ে যান। কী ভাবে শাসকদল মহকুমার তিনটি পুরসভাতেই নিরঙ্কুশ জয় পেল তা নিয়ে জেলা রাজনীতিতে চর্চা শুরু হয়েছে। এক সময় বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল গয়েশপুর এলাকা। ২০১০ সালের পুর নির্বাচনেও দেখা যায় বামে‌রা ওই পুরসভার ১৮টি আসনের সবকটিতেই জয়ী হয়েছিল। যদিও ওই বছরেই কল্যাণী পুরসভা হাতছাড়া হয়েছিল সিপিএমের। সে বার ২০ সদস্যের কল্যাণী পুরসভায় তৃণমূল জিতেছিল ১১টিতে। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস যথাক্রমে পেয়েছিল ৭ ও ২টি করে আসন। হরিণঘাটাতে এ বারই প্রথম ভোট হল। সেখানে বিরোধীশূণ্য জয় পেয়েছে তৃণমূল।

কল্যাণী মহকুমার এই তিনটি পুরসভাই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। মাস দু’য়েক আগে বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচনে দেখা যায় গয়েশপুর পুর এলাকায় সিপিএম এগিয়েছিল ৪টি ওয়ার্ডে। আর একটি একটি ওয়ার্ডে সিপিএম মাত্র ৫ ভোটে হেরেছিল। একই ভাবে হরিণঘাটা পুর এলাকাতেও লোকসভার উপ নির্বাচনেও বামেরা বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে শাসক দলকে টপকে এগিয়েছিল। যেমন হরিণঘাটা পুর এলাকায় ছ’টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বামেরা। ওই পুর এলাকায় লোকসভার উপ নির্বাচনের নিরিখের ৪টি আসনে সিপিএম হেরেছিল ৫০ এর কম ভোটে।

কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে ওই তিন পুর এলাকায় কেন বিরোধীরা দাঁত ফোটাতেই পারল না? সিপিএম এ ক্ষেত্রে দুষছে শাসক দলের নীরব সন্ত্রাসকে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘কল্যাণীতে আমাদের জেতা একটি আসনে এ বার ভোট পেয়েছি সাকুল্যে ২০টি। এটা কী করে হয়? শাসক দলের সন্ত্রাসের জেরে আমাদের ভোটাররা ভোটই দিতে পারেননি।’’ বামফ্রন্ট ও বিজেপির অভিযোগ, ভোটের আগের দিন রাতেই কল্যাণী ও হরিণঘাটা পুর এলাকায় শাসক দল আশপাশের পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বহিরাগতদের নিয়ে এসে এলাকা দখল করেছিল। সেই বাহিনী ভোটের দিন বিরোধীদের কার্যত বাড়ির মধ্যে নজরবন্দি করে রেখেছিল। তাই শাসক দলের এই জয়। এই জয়ের মধ্যে কোনও নৈতিকতা নেই। সুমিতবাবু বলেন, ‘‘ওদের প্রতিরোধ করতে গেলে আমাদেরও অস্ত্র ধরতে হত। সেটা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। তাই আমরা পরাজিত হলাম।’’

জে‌লা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সন্ত্রাস করলে আমরা তো তাহেরপুরেও জয়ী হতাম। কল্যাণী মহকুমার মানুষ বিরোধীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন