salar

‘এই টাকায় গেলে চলুন, না হলে ট্রেনে যান’

বুধবার সেই সালারে গিয়েই দেখা গেল, ওই হাসপাতালের সামনের অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের মেজাজ তেমনই রয়েছে।

Advertisement

কৌশিক সাহা

সালার শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ০৮:৫৭
Share:

ভাড়ার অপেক্ষায়। সালারে। নিজস্ব চিত্র 

সোমবার রাতে সালার গ্রামীণ হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশ তাঁদের পছন্দের অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার না করায় এক মহিলাকে সালার থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বাধা দেন। তিনি যে অ্যাম্বুল্যান্সে ছিলেন তার পথ আটকানো হয়। এমনকি মহিলার অক্সিজেনের নলও খুলে দেওয়া হয়। মহিলা মারা যান। তিন জন গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisement

বুধবার সেই সালারে গিয়েই দেখা গেল, ওই হাসপাতালের সামনের অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের মেজাজ তেমনই রয়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে কোথাও নিয়ে যেতে হবে এই কথা শুনেই দর হাঁকলেন তাঁরা। কেমন হল তেমন কথাবার্তা?

রোগীর আত্মীয়: অ্যাম্বুল্যান্সে বর্ধমান ও বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে রোগী নিয়ে যেতে ভাড়া কত?

Advertisement

অ্যাম্বুল্যান্সের চালক: বহরমপুর যেতে ২২০০ টাকা। সঙ্গে অক্সিজেনের জন্য ৪০০ টাকা। বর্ধমানের ক্ষেত্রে ২৫০০ টাকা, অক্সিজেনের জন্য আরও ৫০০ টাকা।

রোগীর আত্মীয়: এতো বেশি! কিছুটা কম করুন না।

আর এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক: কী বলি দাদা, সারা দিনে ভাড়া পাওয়াই যায় না। আমি বেশি বলিনি। যাবেন কোথায়? বহরমপুর না বর্ধমানষ

আত্মীয়: বহরমপুর। শিমুলিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হবে।

চালক: ২২০০ টাকা ঠিকই বলেছে। ২০০ টাকা কম দেবেন। কিন্তু কাউকে বলবেন না।

আত্মীয়: অক্সিজেনের ৪০০ টাকা দিতেই হবে?

চালক: অক্সিজেন আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হয়। ফলে ওই টাকাটা বাড়তি দিতেই হবে। ৩০০ টাকা দেবেন। ফোন করে ডেকে নেবেন, পৌঁছে যাব।

আত্মীয়: সব মিলিয়ে ২২০০ টাকার মধ্যে রাখলে হয় না? আমরা গরিব মানুষ। একবার ভেবে দেখুন না দাদা।

চালক: মানুষকে যত সুবিধা দেওয়া হয়, মানুষ ততই সুবিধা নিতে চান। এর থেকে কমে আর পারা যাবে না দাদা। এই টাকায় গেলে চলুন, না হলে ট্রেনে করে নিয়ে যান। আপনি গাড়িতে করে অক্সিজেন দিয়ে রোগী নিয়ে যাবেন আর একটু বেশি টাকা খরচ করবেন না, সেটা আবার হয় না কি!

সামান্য দূরের ভরতপুর গ্রামীণ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের কথা অবশ্য একটু অন্য রকম।

রোগীর আত্মীয়: বহরমপুর যেতে অক্সিজেন-সহ ভাড়া কত?

চালক: বহরমপুর ১৮৫০ টাকা গাড়ি, অক্সিজেন ৩০০টাকা। মোট ২১৫০ টাকা।

আর এক চালক: দাদা, দিনে রাতে আমাদের একটাই রেট।

আত্মীয়: আচ্ছা সালারে কী হয়েছে?

চালক: আর বলেন না। সালারের অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা যে কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাতে অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের কলঙ্ক ছাড়া আর কী! বাদ দিন।

কিন্তু কেন অ্যাম্বুল্যান্স বেশি টাকা চায়? তার উত্তর নানা জনের নানা রকম। তবে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। তবে অনেক সময় রোগীর পরিবার বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেন। সালারে যা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’’ জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক বিমল চন্দ্র শর্মা জানান, অতিরিক্ত কোনও কর অ্যাম্বুল্যান্সকে দিতে হয় না। তিনি বলেন, ‘‘বরং টোল দিতে হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন