চিকেন-রেজালা-মাটন কষা হাওয়া, মেনুতে হিট পান্তা

টেবিলের এক কোনে পড়েই রয়েছে মেনু কার্ড। সে দিকে চোখ না বুলিয়েই সরাসরি প্রশ্ন— ‘‘দাদা, হালকা কোনও খাবার আছে? এই টক ডাল-ভাত-পোস্ত... এ সব।’’

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও শুভাশিস সৈয়দ

কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১০
Share:

বহরমপুরের একটি হোটেলের মেনু।—নিজস্ব চিত্র

টেবিলের এক কোনে পড়েই রয়েছে মেনু কার্ড। সে দিকে চোখ না বুলিয়েই সরাসরি প্রশ্ন— ‘‘দাদা, হালকা কোনও খাবার আছে? এই টক ডাল-ভাত-পোস্ত... এ সব।’’

Advertisement

না, খালি পেটে ফিরতে হচ্ছে না কাউকে। গরমে বদলে গিয়েছে হোটেলের মেনু। আম ডাল-আলু সিদ্ধ-উচ্ছে-পোস্ত বড়া-ঝিঙে পোস্ত-চাল কুমড়ো-লাউ ঘণ্ট, শেষ পাতে আমের টক কিংবা টক দই, লম্বা লিস্ট। আমিষে রয়েছে কালো জিরে ফোড়ন দিয়ে মাছের ঝোল। মাটন রেজেলা, মাটন কষা ছেড়ে খাদ্যরসিকদের পাতে পড়ছে খাসির মাংসের পাতলা ঝোল।

কিন্তু ফ্রায়েড রাইস-চিলি চিকেন, কষা মাংস দিয়ে লাছা পরোটা বা বিরিয়ানি? না, মেনুতে ও সবের দেখা নেই। তার বদলে তালিকায় জ্বলজ্বল করছে ‘পান্তা ভাত— এই গরমে বিশেষ আকর্ষণ’।

Advertisement

শুধু মধ্যাহ্নভোজই নয়, মেনু কার্ড উল্টোতেই দেখা যায় পাল্টে গিয়েছে সকালের খাবারও। ব্রেকফাস্টে স্যান্ডউইচের পরিবর্তে ছাতুর সরবত কিংবা তরমুজের সরবত। লুচি-তরকারিতে ‘না’, তার বদলে হাত রুটি আর হালকা সব্জি।

টানা প্রায় দু’সপ্তাহ, ৪০ ডিগ্রির নীচে নামছেই না পারদ। বৃষ্টি? সে তো নিরুদ্দেশ! কবে দেখা মিলবে, তার কোনও পূর্বাভাস দিতে পারছে না হাওয়া অফিস। বর্ষা আসতে সেই জুন। এ অবস্থায় লোকের হাঁসফাস অবস্থা। খদ্দের কমেছে হোটেলেও। বাড়ির বাইরে যাঁরা রয়েছেন, হোটেলে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই, তাঁরাই এক মাত্র ঢুঁ মারছেন। তা-ও বেশিরভাগ লোকই চাইছেন পান্তা ভাত আর কাঁচা পেঁয়াজ।

কৃষ্ণনগরের একটি হোটেলের বিশেষ আকর্ষণ। —নিজস্ব চিত্র

কৃষ্ণনগর শহরের এক নামী হোটেল কর্তৃপক্ষ জানালেন, মশলাদার খাবারের বিক্রি একেবারে নেই। মানুষ এসেই খোঁজ নিচ্ছেন, কম মশলার খাবার কী আছে। আর তাই মাছ-মাংসের পরিবর্তে সব্জি-ভাতই বিকোচ্ছে বেশি। ‘‘বিশেষ করে শুক্তো, আম বা উচ্ছে ডালের পাশাপাশি নিম-বেগুন ভাজা, আলু উচ্ছের তরকারির খুব চাহিদা,’’ বলছেন তিনি। এ সব বিষয় মাথায় রেখেই কৃষ্ণনগর শহরের একটি হোটেলে রান্না করা হচ্ছে নানা নিরামিষ পদ। হোটেলের মালিক দেবাশিস সাহা বলেন, ‘‘সারা বছরই আমাদের হোটেলে কম মশলা দিয়ে রান্না হয়। গরমে তো আরও কম। রোদে পুড়ে আসার পরে মানুষ এ ধরনের খবারই চায়। মাছ বা মাংস খেলেও হালকা ঝোল।’’ কৃষ্ণনগরের অন্য একটি হোটেলে আবার ‘পান্তা’-র থালির চাহিদা তুঙ্গে। কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, আমতেল, আলু-পেঁয়াজ ভাজা, ডালের বড়া, ডিম ভাজার সঙ্গে শেষে থাকছে টকদই, রসগোল্লা আর পান। এই হোটেলের কর্ণধার সঞ্জয় ঢালিও একই কথা বললেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন কষা মাংস আর কেউ খেতে চাইছেন না। মাছের ঝোলও হালকা হলেই ভাল।’’

বহরমপুরের এক হোটেল মালিক অমিত সরকার বললেন, ‘‘মিহি করে শসা বেটে, তার সঙ্গে দই মিশিয়ে বিট লবণ ও চিনি দিয়ে নতুন স্বাদের একটা সরবত বানিয়েছি গরমের কথা মাথায় রেখে। নাম রাখা হয়েছে ‘কুল কিউকামবার সরবত’।’’ জানালেন, দুপুরের মেনুতে পাবদা মাছের পাতলা ঝোল কিংবা জিরে বাটা দিয়ে হালকা মাছের ঝোল। ‘‘আম ডাল, পোস্ত বড়া এবং পোস্ত বাটার পাশে লঙ্কা ও লেবু দিয়ে ডিস সাজিয়ে দিচ্ছি, তৃপ্তি করে খাচ্ছে সবাই,’’ বললেন তিনি।

বহরমপুরের লালদিঘির একটি হোটেলে দুপুরের মেনুতে রান্না হচ্ছে দই-পটল। জিরে দিয়ে মাছের পাতলা ঝোলে থাকছে পেঁপে। হোটেলের এক অতিথির আবদারে বানানো হয়েছিল ডাঁটা-পোস্ত। আম-ডালের সঙ্গে ডাঁটা পোস্ত হিট করে যাওয়ায় এখন প্রতি দিনই দুপুরের মেনুতে রাখা হচ্ছে, জানালেন হোটেল মালিক চন্দন সরকার। বললেন, ‘‘সারা দিনের কাজের শেষে রাতে হোটেলে ফিরে অতিথিরা হালকা খাবারই পছন্দ করছেন। ফ্রায়েড রাইস বা বিরিয়ানির চেয়ে সাদা বাতের সঙ্গে বাঙালি রান্নার কদর বেশি।’’ আর বিরিয়ানির জন্যই যে সব হোটেলের পরিচিতি, সেখানে এখন বিকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে বাঙালি পোলাও। পমপ্লেট তন্দুর কিংবা মাছ ভাপা। মুখরোচকে চাইনিজের চাহিদাও খারাপ নয়। বিশেষ করে চাউমিনের। তবে হাক্কা নয়, গ্রেভি চাউ। সব মিলিয়ে, এই গরমে মেনু কার্ডের পাতা উল্টোতেই স্পষ্ট সব কিছু পাল্টে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন