দলের তরফ থেকে তো বটেই, সরকারিভাবে ভর্ৎসনা জুটেছিল আগেই। এবার কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢোকার ক্ষেত্রেও কার্যত নিষেধাজ্ঞা জুটল তৃণমূলের বিতর্কিত কাউন্সিলর অমর রায়ের।
সেই নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা নদিয়া জেলার পর্যবেক্ষক, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার ২১ জুলাইয়ের সভা উপলক্ষে কল্যাণীতে তৃণমূলের বর্ধিত সভায় এসে অমরবাবুকে ডেকে পাঠিয়ে হাসপাতালের সমস্ত কাজকর্ম থেকে তাঁকে দূরে থাকতে বলা হয়। এর পরে কোনও বিতর্কে তাঁর নাম জড়ালে, দল থেকে তাঁকে বের করারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় তাঁকে।
অভিযোগ, আয়া চক্র থেকে শুরু করে ওষুধ চক্র— সব বিষয়েই নাম জড়িয়েছে অমরবাবুর। দিন কয়েক আগে তাঁর ছেলে গৌতম রায়ের নেতৃত্বে একদল যুবক হাসপাতালের কয়েক জন জুনিয়র জাক্তারকে মারধর করে। এক চিকিৎসককে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। তার পর থেকেই অমরবাবুর কীর্তিকলাপ নিয়ে সরব হয় সব মহল। এমনকী দলের নেতারাও।
হাসপাতালের বাইরে গৌতমের ওষুধের দোকান রয়েছে। এই ঘটনার পর পুলিশ গৌতমকে গ্রেফতার করে। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিশেষ বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই অমরবাবুকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সেই বৈঠকে অমরবাবু জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কোলে মাথা রেখে কেঁদে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে যে কাজ কিছু হয়নি তার প্রমাণ মিলল রবিবার।
এদিন দলের সভাতে এলেও কিছুটা লুকোচুরি খেলছিলেন অমরবাবু। এদিন তিনি ছিলেনও বড় নিঃসঙ্গ। দিন কয়েক আগেও তাঁর আশপাশে প্রচুর মানুষের ভিড় লেগেই থাকত। এদিন এক প্রাক্তন কাউন্সিলর ছাড়া তার সঙ্গে কাউকে কথা বলতেও বিশেষ দেখা যায়নি। সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরা দেখলেই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
রবিবার দুপুরে কল্যাণী বিদ্যাসাগর মঞ্চের সভায় ছিলেন জেলা সভাপতি, বিধায়ক গৌরিশঙ্কর দত্ত-সহ একাধিক বিধায়ক ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সভার শুরুতেই পার্থবাবু অমরবাবুর খোঁজ করেন। ডেকে আনা হয় তাঁকে। সামনে পেয়েই পার্থবাবু তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি আয়াদের কারবার করেন?’’ কাঁচুমাচু মুখে অমরবাবু কোনও রকমে না বলার চেষ্টা করেন।
পার্থবাবু তখন তাঁকে বলেন, ‘‘হাসপাতালের কোনও বিষয়েই আপনি আর ঢুকবেন না। প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতালে ঢুকবেন না। এর পর আর কোনও বিষয়ে আপনার নাম জড়ালে পার্টি থেকে বের করে দেওয়া হবে।’’
ছেলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই জানানোর পরে পার্থবাবু গৌরীবাবুকে বলেন, তা হলে ওঁর ছেলেকে জেলে পোরার ব্যবস্থা করুন। আর অমপৃরবাবুর বিরুদ্ধে অৈবধ কিছু দোকান ঘর তৈরির অভিয়োগ রয়েছে। সেই দোকানঘরগুলিতে তালা ঝোলাতে বলেন পার্থবাবু।
তারপরে অমরবাবু কার্যত পালিয়ে বেড়ান।