আকচাআকচিটা চলছিলই। কালীঘাট থেকে বার্তা এলেও নড়ে চড়ে বসার মতো তেমন কোনও সাড়া শান্তিপুরের যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চোখে পড়েনি। মালদহ থেকে বন্যা দেখে ফেরার পথে রানাঘাটে দাঁড়িয়ে খোদ দলনেত্রী সতর্ক করে গিয়েছিলেন জেলার সব নেতা-কর্মীদের। এ বার তাই শান্তিপুরের দুই নেতা অরিন্দম ভট্টাচার্য এবং অজয় দে’র তলব হল দলের মহাসচিবের ঘরে।
শনিবার সেখানেই, দু’পক্ষকে কার্যত ‘ব্যালান্স’ করে মহাসচিব পার্থ চট্ট্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, আর বিবাদ না মেটালে দুই নেতাকেই ‘অন্য পথ’ দেখতে হবে। এ দিন নিজের বাড়িতে নদিয়া জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পার্থ। দলের নির্দেশ অমান্য করলে তার জন্য যে তৈরি আছে শান্তিমূলক ব্যবস্থাও, মহাসচিব তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। কংগ্রেস-সিপিএম জোটের প্রার্থী হিসাবে শান্তিপুর বিধানসভা থেকে জয়ী হওয়ার পরে শঙ্কর সিংহের সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন অরিন্দম। অরিন্দমবাবু তৃণমূলে যোগ দাওয়ার পরে দলের ভিতরে কার নিয়ন্ত্রণ থাকবে তা নিয়ে বিবাদ চরমে ওঠে দুই নেতার মধ্যে। এমনকী সেটা বোমাবাজি পর্যন্তও গড়ায়। দুই নেতার অনুগামী কাউন্সিলর ও নেতাদের নিরাপত্তার জন্য সকলের বাড়ির সামনে বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারও মোতায়েন করতে হয়েছে শান্তিপুর থানাকে।
বৈঠকে অজয় দে, অরিন্দম ভট্টাচার্যের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস, প্রাক্তন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত, তিন কার্যকরি সভাপতি পুন্ডরিকাক্ষ সাহা, কল্লোল খাঁ, শঙ্কর সিংহ ও রানাঘাটের বিধায়ক তাপস মন্ডল। বেলা এগারটা থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চলে বৈঠক। দলীয় সূত্রে খবর, এ দিন অজয় দে অভিযোগ তোলেন, দলের কোন সিদ্ধান্ত তাকে জানানো হচ্ছে না। পাল্টা অরিন্দমের দাবি, বিজেপি-র হয়ে দল বিরোধী কাজ করছেন অজয়বাবু। তবে এই বাদানুবাদ বেশি দূর গড়াতে দেননি পার্থ। সিদ্ধান্ত হয় শান্তিপুর পুরসভার সমস্ত দায়িত্ব পালন করবেন অজয় দে। আর পদাধিকার বলে বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ করবেন অরিন্দম। তবে সবটাই করতে হবে আলোচনার ভিত্তিতে।
ঠিক হয় দু’জনের মধ্যে যোগসূত্র হিসাবে কাজের জন্য শহর কমিটির চেয়ারম্যান করা হবে একেবারে প্রথম দিকের তৃণনূল নেতা রাধিকারঞ্জন মুখোপাধ্যায়কে। আর এক পুরনো নেতা অরবিন্দ মৈত্রের শহর কমিটির সভাপতি হিসাবে নিয়োগের সিদ্ধানেত সিলমোহর দেন মহাসচিব। কার্যকরি সভাপতি করা হয় অজয় দের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ট কাউন্সির সাহাজাহান শেখকে। এই বৈঠকে অজয় দের কট্টোর বিরোধী বলে পরিচিত ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুব্রত ঘোষকে উপপুরপ্রধান করার প্রস্তাব করেন অরিন্দম। প্রয়োজনে সুব্রতবাবুকে চেয়ারম্যান ইন কাইন্সিলর করার প্রস্তাবও দেন তিনি। কিন্তু তার এই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি পার্থবাবু। বলা হয় অজয়বাবু নিজের মত করেই পুরসভা পরিচালনা করবেন।