পেশেন্ট গাড়ির অপেক্ষায় বসে মুর্শিদাবাদ

রোগীদের পরম ভরসার সেই ধীরস্থির ট্রেনটির চাকা নড়েনি চার দিন যাবৎ। আর তারই খেসারত দিচ্ছেন বিভিন্ন স্টেশনে হাপিত্যেশ করে বসে থাকা রোগীরা।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩২
Share:

‘পেশেন্ট গাড়ি’র অপেক্ষায় মুর্শিদাবাদ।

ট্রেনটার চালু নাম ‘পেশেন্ট গাড়ি’! সাবেক একটা নাম আছে বটে, ৬৩১০২ লালগোলা-শেয়ালদা মেমু প্যাসেঞ্জার, কিন্তু ভোর থেকে রোগী কিংবা তাঁদের পরিবারের লোকজন নিয়ে কলকাতার দিকে ছুটে যাওয়া ট্রেনটিকে তামাম জেলার মানুষের কাছে ওই চেনা লব্জেই পরিচিত, পেশেন্ট গাড়ি।

Advertisement

রোগীদের পরম ভরসার সেই ধীরস্থির ট্রেনটির চাকা নড়েনি চার দিন যাবৎ। আর তারই খেসারত দিচ্ছেন বিভিন্ন স্টেশনে হাপিত্যেশ করে বসে থাকা রোগীরা। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় গত চার দিন ধরে উত্তাপের আঁচে সব থেকে বেশি পুড়েছে রেল স্টেশন। বেলডাঙা থেকে জঙ্গিপুর, নিমতিতা থেকে মণিগ্রাম— একের পর এক স্টেশনে ভাঙচুরের সঙ্গেই কোথাও তছনছ হয়েছে স্টেশন মাস্টারের ঘর, কোথাও ভেঙে তুবড়ে দেওয়া হয়েছে লেভেল ক্রশিংয়ের বার। বিক্ষোভের রোষে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে লালগোলার কৃষ্ণপুর রেল ইয়ার্ডের একাধিক ট্রেন। তার জেরেই জেলার রেলপথে এখন আর ট্রেন চলাচলের শব্দ নেই।

লালগোলা-শিয়ালদহ শাখার পেশেন্ট গাড়িও তাই স্তব্ধ। কলকাতার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে পাড়ি দেওয়া সেই রোগীদের কথায় এখন তাই হতাশা— ‘অসুস্থ মানুষটাকে নিয়ে এ বার কলকাতায় যাব কীসে!’ লালগোলার শিসা রমজানপুরের মুসবেরা বিবির মেয়ে রিমা খাতুনের থুতনিতে জরুল হয়েছে। কলকাতার একটি হাসপাতালে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে তার অস্ত্রোপচার হয়। শনিবার দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের দিন ছিল। কিন্তু ট্রেন বন্ধ, যেতেই পারেননি তিনি। মুসবেরা বলছেন, ‘‘পেশেন্ট গাড়ির মতো কম খরচে সকাল সকাল কলকাতায় পৌঁছে আর কে দেবে! আমাদের আর সঙ্গতি কোথায়, কী করে যাব বলুন দেখি?’’ কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের কাছে একটি নার্সিংহোমে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার কথা ছিল আশিস সরকারের। তিনি বলছেন, ‘‘বেলডাঙায় অশান্তির জেরে শুক্রবার কলকাতা যেতে পারলাম না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যাব ভাবছি। কিন্তু শুনছি তো পেশেন্ট গাড়িও বন্ধ, দেখি।’’ লালগোলার প্রদীপ ভৌমিকের দু’পায়ে স্নায়ুর সমস্যা। চলাফেরা করতে বড় সমস্যা। রবিবার তাঁর কলকাতায় বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল। স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়ায় পাড়ি দিতে পারেননি কলকাতায়। প্রদীপ বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের দিন পিছিয়ে গেল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। মানুষ আন্দোলন করতে পারেন। কিন্ত এরকম ধ্বংসাত্মক আন্দোলন হলে সবারই ক্ষতি।’’ বহরমপুরের এক মহিলা দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দিন চারেক আগে তাঁর ছুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সে গুড়ে বালি, ঘরে ফিরবেন কী করে!

Advertisement

ভোরের বাঁশি বাজিয়ে কলকাতার দিকে ছুটে যাওয়া সেই পেশেন্ট গাড়ির অপেক্ষায় তাই দিন গুনছে মুর্শিদাবাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন