ভাগীরথী গিলেছে সব, দিনমজুরিই ভরসা

এক সময় তাঁদের জমিতেই আর পাঁচ জন মজুর খাটতেন। কিন্তু ভাগীরথী গিলে নিয়েছে সব কিছু। ভিটেমাটি-চাষের জমি। ফলে তাঁরাই এখন অন্যের জমিতে মজুর খেটে দিন গুজরান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্য এমন বদলে গিয়েছে কৃষ্ণনগর ২ ব্লকের রাজাপুরের সুদেব চৌধুরীর। বিঘা এগারো জমি ছিল খোকন মণ্ডলের। এখন তা কমতে কমতে ১০ কাঠায় এসে ঠেকেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলপুকুর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০০:০৩
Share:

বাহিরদ্বীপে এ ভাবে পাড় ভাঙছে গঙ্গা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

এক সময় তাঁদের জমিতেই আর পাঁচ জন মজুর খাটতেন। কিন্তু ভাগীরথী গিলে নিয়েছে সব কিছু। ভিটেমাটি-চাষের জমি। ফলে তাঁরাই এখন অন্যের জমিতে মজুর খেটে দিন গুজরান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্য এমন বদলে গিয়েছে কৃষ্ণনগর ২ ব্লকের রাজাপুরের সুদেব চৌধুরীর।

Advertisement

বিঘা এগারো জমি ছিল খোকন মণ্ডলের। এখন তা কমতে কমতে ১০ কাঠায় এসে ঠেকেছে। দুই দাদা শ্রমিকের কাজ করছেন। একজন চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। আর তিনি নিজে সব্জি বিক্রি করছেন।

কমবেশি একই অভিজ্ঞতা গ্রামের বাসিন্দাদের। সম্প্রতি তাঁরা কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পালকে ভাঙন রোধের দাবী জানিয়ে চিঠি লেখেন। সাংসদ জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের চিঠি জমা দিয়েছেন। তাপস বলেন, “এর আগেও আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ভাগীরথীর ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। তা ছাড়াও রাজ্যের সেচ দফতরের মন্ত্রীকেও বিষয়টি জানিয়েছিলাম। ফের জেলাশাসকের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি।”

Advertisement

নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “ওই এলাকার বাসিন্দাদের চিঠি পেয়েছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এলাকার বাসিন্দারা জানান, বছর ত্রিস ধরে এলাকায় ভাগীরথীর ভাঙন হচ্ছে। কৃষ্ণনগর ২ ব্লকের রাজাপুর, বাহিরদ্বীপ, শঙ্করপুর, বলাইনগর এলাকায় ভাঙন বেশি। এমনকি ভাগীরথীর এপারে নদিয়া লাগোয়া বর্ধমানের পূর্বস্থলীর গ্রাম দেবনগরের বহু বাড়িঘর ভাগীরথী গর্ভে চলে গিয়েছে। দেবনগরের বাসিন্দা নিতাই সরকার বলেন, “বাড়িঘর-চাষের জমি আগেই ভাগীরথীর গর্ভে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে নদীর ধারে বাস করছি।” ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এ বছর কোথাও একশো ফুট। কোথাও ৫০ ফুট নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। রাজাপুরের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ গুইন বলেন, “গত ৬-৭ বছর ধরে আমরা সেচ দফতর থেকে শুরু করে জেলাপ্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়ে ভাঙন রোধের আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। অথচ নদী ক্রমশ গ্রামের দিকে ধেয়ে আসছে। এ ভাবে চলতে থাকলে চাষের জমি ছাড়িয়ে গ্রামের দিকে ঢুকে যাবে নদী।”

এই এলাকায় নদীর ভাঙন কেন হচ্ছে?

সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, এমনিতেই জেলায় ভাগীরথীর বিভিন্ন জায়গা ভাঙনপ্রবণ। এ দিকের নদীর পাড়ে মাটির স্তরে প্রথমে থাকে পলি, তার পরে বালি। জল বাড়লে নদীপাড়ের বালির স্তরের জল ঢুকে যায়। জল নেমে যাওয়ার সময় নদীপাড়ের বালি ধুয়ে নিয়ে যায়। যার ফলে পাড়ের জায়গাটা ফাঁপা হয়ে যায়। তার ওপরে নদী দিয়ে বার্জ চলাচলের ফলেও ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে।

বার্জ চলাচলের জন্য ভাঙন বাড়ছে তা কি করে বুঝল সেচ দফতর। কোনও সমীক্ষা হয়েছে এর ওপরে? এর উত্তরে জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, সমীক্ষার পরিকাঠামো নেই। তবে বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেন। তার পরে রাজ্যকে বিষয়টি জানিয়েছি।

জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, জেলায় সব মিলিয়ে জেলায় ৭৪৫ কিলোমিটার নদীবাঁধ রয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন রয়েছে। ইতিমধ্যে বর্ষার আগেই ১৩টি জায়গায় নদী ভাঙন রোধে কাজ হয়েছে। আরও ৮টি জায়গায় কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। তবে সেই তালিকায় নাম নেই কৃষ্ণনগর ২ ব্লকের এই সব এলাকার। কেন এই এলাকায় কাজ হচ্ছে না?

সেচ দফতর সূত্রের খবর, যে সব এলাকায় ঘরবাড়ি রয়েছে সে সব এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে অগ্রাধিকার দেয়। এই এলাকায় মূলত চাষের জমি নদীগর্ভে যাচ্ছে। ফলে এখনই কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা আইডব্লিউআই এর প্রতিনিধিরা এই এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলে সেচ দফতরের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন