বেহাল রাস্তা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
কোন রাস্তা তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। তারপর রাস্তার পিচের চাদর উঠে গিয়েছে কোন কালে। রাস্তার মাঝে তৈরি হয়েছে পেল্লাই সাইজের গর্ত। আবার অনেকক্ষেত্রে রাস্তা তৈরির অনুমোদন মিলেছে কয়েক বছর আগে। কিন্তু সে কাজ আজও শেষ হল না। ঠিকা সংস্থাগুলি ঢিলেতালে কাজ করছে। যেন কাজ শেষ করার কোনও দায়ই নেই তাদের। আর এ সবের নিট ফল, রঘুনাথগঞ্জ ও তার পাশ্ববর্তী ব্লকের কয়েক হাজার পথচারীর নিত্য ভোগান্তি। আর ভাঙা সড়কে চলাফেরা করতে গিয়ে মাঝমধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে লোকজনকে। গত কয়েকদিনে খারাপ রাস্তায় ১৩টি দুর্ঘটনায় ঘটে গিয়েছে। এত কিছুর পরও প্রশাসনের টনক নড়ার অবশ্য কোনও লক্ষণই নেই।
নাজিরপুর–পারাইপুর রাজ্য সড়কটি বানানোর জন্য সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০০৮ সালে ওই রাস্তার শিলান্যাস করেন তৎকালীন সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়। তারপর আট বছর পেরিয়ে গেলেও রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি তদারকি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গ্রামীণ উন্নয়ণ সংস্থা। রাস্তার উপর ৪টি সেতু তৈরির সংস্থান থাকলেও, একটি সেতুর কাজই শুরু হয়নি। বাকি সেতুগুলির কাজ অর্ধেক হয়ে থমকে রয়েছে। অথচ রাস্তার পিচ উঠে গিয়েছে। বেরিয়ে পড়েছে বড় বড় পাথর।
ওই ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়েই চলছে লছিমন, টুকটুক, অটো, মোটরবাইক। প্রতিদিনই কেউ না কেউ দুর্ঘটনায় পড়ছে। বংশবাটি, হারোয়া , উমরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। ওই পথ ধরেই লোকজনকে আসতে হয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। রাস্তাটি জাতীয় সড়কের সংযোগাকারীর ভূমিকা পালন করে। এই রাজ্য সড়কে ধরেই সহজেই যাওয়া যায় পড়শি বীরভূমে। ফলে দুই জেলার যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও অনেকেই এই রাস্তা ব্যবহার করে থাকেন।
বংশবাটির বাসিন্দা কমল মজুমদার বলছেন, “এই রাস্তায় সে ভাবে ভারি গাড়ি চলে না। তবু রাস্তার মাঝে প্রমাণ সাইজের পাথর বেড়িয়ে পড়েছে। রাস্তা তৈরির সময় ঠিকা সংস্থার উপরক কোনও নজরদারি না থাকার ফলে এই দশা। রাস্তার গোঁড়ায় গলদ রয়েছে।’’ ওই রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ, হাঁটতে গেলেই পাথরে হোঁচট খেতে হয়। গত কয়েকদিনে ওই রাস্তায় গোটা পাঁচেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। বীরভুমের হরিশপুরের এক মহিলার হাত ভেঙেছে বাইক থেকে পড়ে গিয়ে। চলন্ত মোটরবাইকের চাকায় ঘর্ষণ লেগে ছিটকে যাওয়া পাথরে মাথা ফেটেছে এক ব্যক্তির।
একই অবস্থা রঘুনাথগঞ্জ শ্মশান থেকে নতুনগঞ্জ রাস্তারও। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি তৈরির পর প্রায় আট বছর পেরিয়েছে। কোনো রক্ষণাবেক্ষণ নেই। সংস্কার তো দূরের কথা। অথচ, অতি গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়ক পথ সাগরদিঘির বালিয়া হয়ে গিয়ে মিশেছে আজিমগঞ্জে। অন্তত ১০০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ ওই রাস্তা ব্যবহার করেন। চলে শ’খানেক অটো, টুকটুক ও লছিমন। রাস্তা দিয়ে প্রতি নিয়ত যাতায়াত করে মাটি ভর্তি লরি। খানাখন্দে ভরা যেন রাস্তা যেন শুকনো ডোবার আকার নিয়েছে। মাঝে মাঝে গর্ত বোজাতে ঢালা হয় লালমাটি।
মাত্র সাত বছর আগে সীমান্ত উন্নয়ন তহবিলের টাকায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রঘুনাথগঞ্জ থেকে কানুপুর–বহুতালি সড়ক তৈরি হয়েছিল। এই পথ পেরিয়ে অতি সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় বীরভূম বা ঝাড়খন্ডে। ওই রাস্তার সিংহভাগ অংশই গর্তে ভরে গিয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ওই গর্ত যেন জলাশয়ের আকার নেয়। অথচ এই রাস্তা পেরিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় সুতি-১ ব্লকের অন্তত ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষকে। বালি ও পাথর বোঝাই কয়েকশো লরি যাতায়াত করে এই সড়ক ধরে। সেই সব লরি এই রাস্তা দিয়েই বীরভূম ও ঝাড়খন্ডে চলে যায়।
বহুতালির কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রধান শিমুল রবিদাস বলেন, “ভোটের প্রচারে প্রথম বার এসে প্রণব মুখোপাধ্যায় এই রাস্তার হাল দেখেছিলেন। তারপরেই সীমান্ত উন্নয়ন তহবিল থেকে দফায় দফায় ১০ কোটি বরাদ্দ করেন তিনি।’’
বহুতালি গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্য সাইমা ইয়াসমিন বেনজির বলেন, “গত এক বছরে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত ৬ জনের। আহতের সংখ্যা অগুন্তি। বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ হয়েছে মৃতদেহ আটকে রেখে। রাস্তা সারাইয়ের আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হয় না।’’ খানাখন্দে ভরা এই রাস্তা দিয়ে মোটরবাইকে চলাচল করা আরও বিপজ্জনক। রাস্তার উপরে পড়ে থাকে বিকল হয়ে যাওয়া ট্রাক্টর বা লরি। এই রাস্তার উপরেই রয়েছে ৪টি হাইস্কুল ও একাধিক প্রাথমিক স্কুল।
রাস্তার হাল যে যথেষ্ট বেহাল তা মানছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কারণেই রাস্তা সংস্কারের টাকা মিলছে না। রাজ্য নিজেও ওই রাস্তা সারাচ্ছে না। আবার জেলা পরিষদেকেও কাজ করতে দিচ্ছে না। তবে অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তাগুলি
দ্রুত ভাঙছে।’’