হাসপাতাল আছে, ডাক্তার নেই

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই ব্লকে ১৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা, আছেন মাত্র পাঁচ জন। ৩০ জন নার্সের জায়গায় আছেন ১১ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ১২ জনের বদলে মাত্র চার জন। সাফাই কর্মী দু’জন, প্রয়োজন আট জনের। ১২০ শয্যার গ্রামীণ হাসপাতালে গড়ে প্রায় একশো রোগী সব সময়ে অন্তর্বিভাগে ভর্তি থাকেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

খড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫৮
Share:

রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট। খড়গ্রাম গ্রামীণ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

ডাক্তার নেই, স্বাস্থ্যকর্মী নেই। দাঁড়িয়ে আছে ‘হাসপাতাল’।

Advertisement

কার্যত এমনই অবস্থা খড়গ্রামে। চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকছে গোটা ব্লকের স্বাস্থ্য পরিষেবা। ব্লকে একটি গ্রামীণ হাসপাতাল ও চারটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় পরিষেবা তলানিতে। ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্তের বাজারে এই অব্যবস্থা আরও বিপদ ডাকছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই ব্লকে ১৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা, আছেন মাত্র পাঁচ জন। ৩০ জন নার্সের জায়গায় আছেন ১১ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ১২ জনের বদলে মাত্র চার জন। সাফাই কর্মী দু’জন, প্রয়োজন আট জনের। ১২০ শয্যার গ্রামীণ হাসপাতালে গড়ে প্রায় একশো রোগী সব সময়ে অন্তর্বিভাগে ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে নিয়মিত আসেন সাড়ে সাতশোর বেশি রোগী।

Advertisement

এ ছাড়াও রয়েছে ঝিল্লি, ইন্দ্রাণী, মারগ্রাম, পারুলিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সব সময়ের জন্য চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এক জন করে ফার্মাসিস্ট ওই সব উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা করেন। ওই কেন্দ্র পরিষ্কার রাখার কাজ থেকে রোদী দেখে ওষুধ দেওয়া— সবই করতে হয় তাঁদের।

ইন্দ্রাণী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সবেধন নীলমণি এক জন ফার্মাসিস্টই। ওই গ্রামের আপু শেখ, পরেশ দাসদের অভিযোগ, “সর্বক্ষণের জন্য ডাক্তার থাকার কথা এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে চিকিৎসকদের থাকার জন্য কোয়ার্টার আছে। নার্স, সাফাইকর্মী সব কিছুই থাকার কথা। কিন্তু সপ্তাহে এক দিনও চিকিৎসক এলাকায় আসেন না। ফলে ফার্মাসিস্টদের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়।’’

খড়গ্রাম গ্রামীণ হাসপাতালের ঝাঁ চকচকে রঙের প্রলেপ। অন্দরের দশা করুণ। একই ভাবে ওই হাসপাতালের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনও ভেঙে পড়ছে। সেখানেও থাকতে ভয় পাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “এমনিতেই গ্রামীণ হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা আসতে চায় না। সেখানে কর্মীদের থাকার ব্যবস্থার এমন হলে আগামী দিনে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মতো দশা হবে গ্রামীণ হাসপাতালেরও।”

খড়গ্রাম ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক নিত্যানন্দ গায়েনও বলছেন, “কী ভাবে যে পরিষেবা দেওয়া হয়, সেটা আমরাই জানি। চার উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফার্মাসিস্টদের চিকিৎসা করা থেকে ওষুধ দেওয়া, সব কিছুই করতে হয়। ব্লকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করার জন্য স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে বহু বার আর্জি জানিয়েছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না।”

খড়গ্রামের বিধায়ক, কংগ্রেসের আশিস মার্জিতের কটাক্ষ, “যে রাজ্যে প্রশাসন ডেঙ্গিকে ‘ডেঙ্গি’ বলতে ভয় পায়, সেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার কী হাল হতে পারে, তা বলাই বাহুল্য!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন