বর্ষার বাবা ও মা। নিজস্ব চিত্র
জন্ম থেকেই রুগ্ন ছিল মেয়েটা। অসুখ লেগেই থাকত। চিন্তায় থাকতাম সব সময়। কিন্তু সেই অসুখে অকালে চিরকালের মতো চলে যাবে মেয়ে, ভাবতে পারেননি বাঁধন বিশ্বাস। চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না। মঙ্গলবার সোয়াইন ফ্লু-আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে তাঁর মেয়ে বর্ষা।
পাশে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছে মা রূপা বিশ্বাস বলেন,“মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না।” সাড়ে পাঁচ বছরের বর্ষাই ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান। রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগদিয়া গ্রামে বাড়ি বর্ষাদের। মঙ্গলবার রাতে দত্তপুলিয়া শ্মশানে শেষকৃত্য হয়েছে।
বর্ষার মৃত্যুর পরে এলাকায় মেডিক্যাল টিম পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনও অঞ্চলে সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়লে কী করতে হবে তার একটা নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে। আশপাশের ৫০টি বাড়ির লোক কী কী সতর্কতা অবলম্বন করবেন সেটাও নির্দেশিকায় বলা থাকছে।’’ তবে বর্ষার মৃত্যুর কারণকে এখনই ‘সোয়াইন ফ্লু’ বলতে চাইছে না স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, বর্ষার নাকের জল এবং থ্রোট সোয়াব পরীক্ষার জন্য গিয়েছে। যদি সোয়াইন ফ্লু প্রমাণিত হয় তবে এই বছরে এটা হবে এই রোগে তৃতীয় মৃত্যু। এখনও পর্যন্ত অন্তত ৪৫ জন এ রাজ্যে সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, সংখ্যাটা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০০।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টারিক ডিজিজেস (নাইসেড)-এর প্রাক্তন অধিকর্তা শেখর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রথম যে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস পাওয়া যায় সেটি ছিল ‘এইচ ফাইভ এন টু।’ এটি শুধু শুয়োরকে আক্রান্ত করত। মানুষের মধ্যে ছড়ালে তা অতি মারাত্মক রূপ নিতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। ২০০৯ সালে পাওয়া যায় ‘নোভেল এইচ ওয়ান এন ওয়ান’ ভাইরাস। একেও সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস বলা হয়। এটি শুয়োর থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। শেখরবাবুর কথায়, ‘‘শুয়োরের হাঁচি, কাশি, মল মূত্র, দেহরস থেকে রোগ ছড়াতে পারে। একই পুকুরে যদি মানুষ ও শুয়োর ব্যবহার করে, ভাইরাস মানুষের দেহে যেতে পারে।’’
বর্ষাদের বাড়ির খানিক দূরে বহিরগাছি পঞ্চায়েতের কালিনগর এলাকায় রয়েছে শুয়োরের খামার। এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রেজেশ ভৌমিক নিজে খামারের মালিকের বাড়িতে গিয়ে তা বন্ধ করতে বলেছেন।