রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষণা করা ‘ডালশস্য বছরে’ পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা হয়েছিল ‘সম্পদ’ জাতের অড়হর। নিজেদের গবেষণাকেন্দ্র ছাড়াও রানিনগর এলাকার এক চাষিকেও দেওয়া হয়েছিল ১ কেজি বীজ। আর ভাদ্রের শুরুতে বিঘা দুয়েক জমিতে ওই ডালশস্য চাষ করে মোটা লাভের মুখ দেখছেন তিনি। হাসি ফুটেছে কৃষি দফতরের কর্তাদের মুখেও।
তাঁদের দাবি, ‘‘আমরা এত দিন ‘উপাচ ১২০’ নামের যে অড়হর ডাল চাষের পরামর্শ দিতাম, সেটা তৈরি হতে ১৭০ থেকে ৮০ দিন লাগে। তা ছাড়া ফলনেও সম্পদের থেকে অনেকটাই কম। ফলে আগামী মরশুম থেকে আমরা চাষিদের সম্পদ চাষের জন্য উৎসাহ এবং সহায়তা দেব।’’ এখানেই শেষ নয়, এই ফসলটি লঙ্কা, পটল ছাড়াও বেশ কিছু ফসলের মাঝে বা আলেও চাষ করা যেতে পারে। তা ছাড়াও পুকুরপাড়ের মত পতিত জমিতেও হতে পারে এই ফসল।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে এখন অড়হর উৎপাদনের গড় পরিমাণ বিঘা প্রতি ১১০ কেজি। নতুন এই প্রজাতির বীজ লাগালে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৮০ কেজি। ফলে আগামী দিনে এই সম্পদ অড়হড়কে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে কৃষি দফতর। তাদের দাবি, এই অড়হর আমাদের ডালশস্যের ঘাড়তি কমাতে বড় ভুমিকা নেবে।
রানিনগরের ডুবাপাড়া রাজাপুরের চাষি ইয়াসিন শেখ আগাগোড়াই একটু ঝুঁকির চাষে আগ্রহী। তা ছাড়া নিয়মিত ব্লকের কৃষি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। পরামর্শ নিয়েই চাষ করেন তিনি। তাঁর আগ্রহ দেখেই রানিনগর ব্লকের উপ-কৃষিঅধিকর্তা মিঠুন সাহা আত্মা প্রকল্পে ১ কেজি সম্পদ জাতের বীজ দিয়েছিলেন ইয়াসিনকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি দফতরের কর্তাদের উপরে ভরসা রাখলেও ১০ কাঠা ফাঁকা জমি আর ১ বিঘার কিছুটা বেশি লঙ্কা, ও একাঙ্গীর সঙ্গে চাষ করেছি। যে ১০ কাঠা কেবল অড়হর চাষ করেছিলাম, তাতে প্রায় দেড় কুইন্টাল ফল পেয়েছি।’’ তা ছাড়া, ৫ মাসেই ওই ফসল উঠে আসায় ওই জমিতেই আবার নতুন করে অন্য চাষও করতে পেরেছেন ইয়াসিন।
এক দিকে উৎপাদন বেশি, অন্য দিকে কম সময়ে ফলে। আগামী দিনে কৃষি দফতরের কাছে প্রকৃত পক্ষেই সম্পদ হয়ে উঠছে ‘সম্পদ’ প্রজাতির এই অড়হর। রানিনগরের উপ-কৃষিঅধিকর্তা মিঠুন সাহা বলেন, ‘‘ইয়াসিন শেখকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম ওই চাষ করার জন্য। উনিও খুব ভাল ভাবে নেন বিষয়টি। খুব ভাল লাগছে যে ঝুঁকি নিয়ে চাষ করে ইয়াসিন শেখ আখেরে লাভবানই হয়েছেন। ভবিষ্যতে চাষিদের কাছে উদাহরণ হয়ে
উঠবেন তিনি।’’ জেলার উপ-কৃষিঅধিকর্তা প্রশাসন দীনেশকুমার পাল বলেন, ‘‘রানিনগর ছাড়াও আমাদের জেলা কৃষি গবেষণাকেন্দ্রে ওই প্রজাতির ডালশস্যের চাষ হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই ভাল ফল মিলেছে। গোটা বিষয়টি সরকারের কাছে একটা রিপোর্ট আকারে জমা দেব। তা ছাড়া আগামী মরশুমে ওই অড়হর চাষের জন্য চাষিদের পরামর্শও দেব আমরা।’’