রাখি পরাচ্ছে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
রাখিপূর্ণিমার সকালে এমন হবে কে জানত! হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন থানার আইসি। পাশে হাসিমুখে এসডিপিও। আশপাশ পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। তার মাঝে রাখি হাতে দাঁড়িয়ে একদল কন্যাশ্রী।
রঘুনাথগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া রাস্তায় এমন দৃশ্য দেখে প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন সফিকুল শেখ। মাথায় যথারীতি হেলমেট নেই। পিছনে বসে থাকা খুদে মেয়েটারও মাথা ফাঁকা। সফিকুল বিড়বিড় করছিলেন, ‘‘আজ কপালে কেস আছে। কেউ রুখতে পারবে না।’’
কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তিনি বাইকটি পুলিশের সামনে দাঁড় করালেন। কিন্তু এ কী! কন্যাশ্রীদের একজন এসে তাঁর হাতে রাখি পরিয়ে দিল। উপরে লেখা—সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ। সঙ্গে দু’টো চকোলেট।
এ বার এগিয়ে আসছেন খোদ আইসি। ঘামতে শুরু করেছেন সফিকুল। আইসি এসে হাসিমুখে করজোড়ে বলছেন, ‘‘জীবনটা আপনার। আপনার উপরেই গোটা পরিবার নির্ভর করে আছে। আপনার কিছু হয়ে গেলে গোটা পরিবারটাই তো ভেসে যাবে। মেয়ের কথা ভেবেও অন্তত হেলমেট পরুন প্লিজ।”
সফিকুলের অবস্থা তখন দেখবার মতো। “হ্যাঁ স্যার , না স্যার, মানে, ইয়ে, আর ভুল হবে না, স্যার।” বলতে বলতে বাড়ির পথে রওনা দিলেন ওই যুবক। বাড়ি ফিরেও তাঁর ঘোর কাটছে না। পুলিশ কি না হাতজোড় করে তাঁকে হেলমেট পরার কথা বলছে। সফিকুল বলছেন, ‘‘এ-ও কি সম্ভব! কী দিনকাল এল রে বাবা। তবে ঘাট হয়েছে। কাল থেকে আর হেলমেটে ছাড়া বাইকে নয়।’’
সফিকুল একা নন, এ দিন এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। রঘুনাথগঞ্জের দাদাঠাকুর মোড়ের ব্যস্ত রাস্তায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কয়েকশো বাইক চালকের হাতে রাখি বাঁধলেন কন্যাশ্রীরা। সঙ্গে ছিল পুলিশের অনুরোধ।
মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করেছেন সেই কবে। তারপর থেকে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’, পুলিশের নজরদারি—সবই চলছে। কিন্তু বেশির ভাগ বাইক চালক এখনও সচেতন হননি। রঘুনাথগঞ্জের আইসি সৈকত রায় বলছেন, ‘‘আমরা আসলে সচেতনতা বাড়ানোর কাজটাই এ দিন করেছি।’’