আক্রান্ত হয়েও কাঠগড়ায় পুলিশ
Protest

কিশোরের মৃত্যু, কাঠগড়ায় পুলিশ

পুলিশ বেপরোয়া হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে তিন জন ধাক্কা খান বলে অভিযোগ।  সেই তিন জনেরই এক জন বছর পনেরোর সেই আকাশ রায়, পরে রানাঘাটের এক বেসরকারি হাসপাতালে যার মৃত্যু হয়।

Advertisement

সুদেব দাস

রানাঘাট শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ০৮:৫৩
Share:

পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় জখম সুমন্ত প্রামাণিক। মঙ্গলবার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির পাশেই ‘গরুচোর’ ধরা পড়েছে। তাকে পাড়ার লোকজন আটকে রেখেছে। সবাই সেখানে ভিড় জমিয়েছে। তাই কৌতূহলী হয়ে বছর পনেরোর ছেলেটাও গিয়েছিল সেখানে।

Advertisement

পরে পুলিশ এসে পড়লে বড় গোলমাল বেধে যায়। আসলে ‘গরুচোর’ বলে যাকে সন্দেহ করা হচ্ছিল, সিলবেড়িয়া গ্রামের সেই নাসির মণ্ডলের বাবা রশিদ মণ্ডলকে আটকে মারধর করা হচ্ছিল। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে জনরোষ তাদের উপর গিয়ে পড়ে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ইটের ঘায়ে আহত হন দত্তপুলিয়া ফাঁড়ির সাব-ইনস্পেক্টর মহম্মদ মনিম আলম-সহ দুই পুলিশকর্মী। পুলিশ বেপরোয়া হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে তিন জন ধাক্কা খান বলে অভিযোগ।

সেই তিন জনেরই এক জন বছর পনেরোর সেই আকাশ রায়, পরে রানাঘাটের এক বেসরকারি হাসপাতালে যার মৃত্যু হয়। বাকি দু’জন, বছর বাইশের সুজন বিশ্বাস ও বছর তিরিশের সুমন্ত প্রামাণিক রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত দুই পুলিশকর্মীও রানঘাটের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু আকাশের মৃত্যু মানতে পারছে না কুলগাছি গ্রাম।

Advertisement

রানাঘাট ২ ব্লকের বহিরগাছি পঞ্চায়েতের কুলগাছি গ্রামের বাসিন্দা গুরুপদ রায়ের দুই মেয়ে, দুই ছেলে। মেয়েদের আগেই বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে রাজকুমার বছর পাঁচেক আগে কাজের জন্য রাজস্থানে চলে গিয়েছেন। ছোট ছেলে আকাশ ও স্ত্রী আশালতাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন গুরুপদ। তাঁর ইচ্ছা ছিল, বড় ছেলেকে অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়াতে না পারলেও আকাশকে উচ্চ শিক্ষা দেবেন। কিন্তু সব ওলটপালট হয়ে গেল।

স্থানীয় ভাতভাঙা জুনিয়র হাই স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল আকাশ। তার পিসতুতো দিদি বীথিকা সরকার বলেন, "বড় ছেলের পাঠানো টাকায় সদ্য ওদের বাড়ির ছাদ ঢালাই হয়েছে। আকাশের বাবাও অসুস্থ। তবু ছোট ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে এত দিন বেঁচে ছিলেন। কোনও ভাবেই ভাইয়ের এই মৃত্যু মানতে পারছি না।"

মঙ্গলবার সকালে গ্রামেরই এক আত্মীয়ের বাড়িতে পুত্রহারা বাবা-মাকে নিয়ে গিয়ে রাখেন পরিজনেরা। শোকে বিহ্বল আশালতার কথা বলার অবস্থা ছিল না। গুরুপদ অভিযোগ করেন, "গন্ডগোলের মধ্যে ওর বুকের উপর দিয়ে পুলিশ গাড়ি চালিয়ে চলে গিয়েছে।" তাঁর দাবি, "আমার ছেলের খুনিদের শাস্তি চাই।"

এ দিন সকাল থেকেই থমথমে ছিল গোটা গ্রাম। নতুন করে যাতে উত্তেজনা না ছড়ায় সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে রুট মার্চ করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশকে মারধরের ঘটনায় জখম কনস্টেবল বিধান সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। আবার জখম রশিদ মণ্ডলের স্ত্রী হামিদা মণ্ডল তাঁর স্বামীকে চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধরের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় লোকজনের বিরুদ্ধে ধানতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কিশোরের মৃত্যুর কোনও গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।

এ দিন বিকালে পানিখালি মোড়ে রানাঘাট-দত্তপুলিয়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ অভিযোগ করেন, "রাজ্য জুড়ে পুলিশের নৈরাজ্য চলছে। গরু চুরির ঘটনায় অভিযুক্তকে আড়াল করতেই পুলিশ গাড়ি চাপা দিয়েছে। পরিবারের কেউ যাতে অভিযোগ না করে, তার জন্য চাপ দিচ্ছে পুলিশ।" রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "বিষয়টি কাঙ্ক্ষিত নয়। মৃত কিশোরের পরিবারের পাশে সকলেরই দাঁড়ানো উচিত। বিজেপি অযথা এটা নিয়ে রাজনীতি করছে।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন