উদ্ধার হওয়া বৃদ্ধা। নিজস্ব চিত্র
রথের মেলায় পথ হারিয়েছিল কিশোরী রাধারানি। আর দোলের নবদ্বীপে পথ হারালেন সত্তর বছরের সুশীলা পাল। দিনকয়েক এক আশ্রমের আশ্রয়ে থাকার পর বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে বাড়ি ফেরাল নবদ্বীপের পুলিশ।
দোলের পরিক্রমায় অংশ নিতে সুদূর আলিপুর দুয়ারের ফালাকাটা থেকে নবদ্বীপে এসেছিলেন বাইশ জনের একটি দল। সে দলের সঙ্গেই আসেন সুশীলা পাল এবং তাঁর স্বামী মণীন্দ্র পাল। ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ভোরে তাঁরা নবদ্বীপে পৌঁছান। তাঁরা উঠেছিলেন গঙ্গার পূর্ব পাড়ে স্বরূপগঞ্জের চৈতন্যভাবগত সেবাশ্রমে। এর পর শুরু হয় নবদ্বীপ মণ্ডল পরিভ্রমণ। বুধবার দোলের দিন তাঁরা মায়াপুর ইসকনে যান। দুপুরের প্রসাদের পর দল বেঁধে গোশালার দিকে যাওয়ার পথে প্রবল ভিড়ে দলছুট হয়ে পড়েন সুশীলা। তাঁর কাছে কোনও ফোন না থাকায় দলের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রবল সমস্যায় পড়েন ওই বৃদ্ধা।
জানা গিয়েছে, এই প্রথম বার নবদ্বীপে বেড়াতে আসা ওই প্রবীণ মহিলা ভাল করে বলতেও পারছিলেন না তিনি কোন মঠে উঠেছেন বা ঠিকানা।
বৃদ্ধা নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর স্বামী এবং ওই দলের লোকেরা মায়াপুর পুলিশ আউট পোস্ট এবং নবদ্বীপ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। ছবি দেওয়া লিফলেট ছাপিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় শহরের বিভিন্ন জায়গায়।
অন্য দিকে, ভিড়ে দলছুট হয়ে পড়া সুশীলা নবদ্বীপের যে মঠে উঠেছিলেন, সেই মঠের নাম-ঠিকানা কাউকে ঠিকমতো বলতে পারেননি। নিখোঁজ হওয়ার দিনচারেক পর গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে নবদ্বীপের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে হদিস মেলে তাঁর। জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধাকে খুঁজতে পুলিশ চারদিকে লোক লাগিয়েছিল। তাঁদেরই এক জন নবদ্বীপ থানার তদন্তকারী অফিসার সুরজিৎ ঘোষের কাছে খবর দেয়, ওই রকম দেখতে এক মহিলা জলমন্দিরে রয়েছেন। তিনি ঘটনাস্থলে সুশীলার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন ইনি সেই নিখোঁজ মহিলা।
কিন্তু কী ভাবে গঙ্গার ও পারের মায়াপুর থেকে তিনি সটান নবদ্বীপে চলে এলেন?
সে কথার জবাবে সুশীলা জানিয়েছেন, একটি সৌম্যদর্শন যুবক তাঁকে এখানে পৌঁছে দিয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পুলিশের অনুমান, তিনি যে মঠে উঠেছিলেন সেটির নাম চৈতন্য ভাগবত সেবাশ্রম। আর ওই বৃদ্ধাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে চৈতন্য সারস্বত মঠে। হয়তো বৃদ্ধা ঠিকানা বলার সময়ে চৈতন্য মঠ কথাটি বলায় ওই ব্যক্তি জলমন্দিরের কথা ভেবেছেন। সেই সূত্রে তিনিই বৃদ্ধাকে নবদ্বীপে পৌঁছে দিয়ে যান।
পুলিশ সুশীলার বাড়িতে খবর দেওয়ার পরে তাঁর ছেলে গৌরাঙ্গ পাল বুধবার মাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। এদিন তিনি বলেন, “মাকে ফিরে পেয়ে আমাদের আনন্দের সীমা নেই। নবদ্বীপের পুলিশের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা সীমাহীন।”