প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে এমনই জাল টাকা। ফাইল চিত্র
খবর একেবারে পাক্কা!
বয়স বছর পঁয়ত্রিশ। পরনে কালচে নীল প্যান্ট ও সাদা শার্ট। হাতে ব্যাগ আছে। বাস থেকে নামবে নিউ ফরাক্কায়।
কিন্তু কখন?
‘সোর্স’ সময়টা ঠিক ভাবে জানাতে পারেননি। পুলিশও ঝুঁকি নিতে নারাজ।
অতএব, সোমবার কাকভোর থেকেই নিউ ফরাক্কা বাসস্ট্যান্ডে শুরু অপেক্ষা। একের পর এক বাস আসছে। যাত্রীরাও উঠছেন, নামছেন। কিন্তু সাদা শার্ট কোথায়?
ফরাক্কা থানার এক পুলিশ আধিকারিক রাস্তার চায়ের দোকানের সামনে সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছেন, ঠিক তখনই এসে থামল একটা বাস।
বাস থেকে নামল কালচে নীল প্যান্ট, সাদা শার্ট। হাতে ব্যাগ। একটু এগিয়ে গিয়ে এক রিকশা চালককে সে জানতে চাইল, ‘‘ঝাড়খণ্ড যাওয়ার কোন রাস্তা এখন খোলা?’’
রিকশা চালক নয়, উত্তরটা দিলেন সাদা পোশাকের এক পুলিশকর্মী, ‘‘আপাতত আমাদের সঙ্গে চল। পরে ঝাড়খণ্ড।’’ ওই যুবককে প্রথমে আটক করা হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত মোক্তাজুল শেখ ওরফে ওহেদুরের বাড়ি মালদহের কালিয়াচক থানার করালি চাঁদপুর গ্রামে। তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দশ হাজার টাকার জাল নোট, ন’টি দিশি পিস্তল, ১৫ রাউন্ড গুলি। মোক্তাজুলকে এ দিন জঙ্গিপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ফরাক্কার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলছেন, ‘‘জেরা করে জানতে পেরেছি, জাল টাকা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মোক্তাজুল যাচ্ছিল ঝাড়খণ্ডে। এই কারবারে ওর সঙ্গে আরও কারা জড়িত, তা জানারও চেষ্টা চলছে।’’
চোরাই মোটরবাইক হোক কিংবা গরু, আগ্নেয়াস্ত্র হোক কিংবা কাশির সিরাপ— সব কিছুর সঙ্গেই লেপ্টে রয়েছে জাল টাকা। এর আগেও ফরাক্কা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মোটরবাইক চুরির এক চক্র। দফায় দফায় উদ্ধার হয় প্রায় ২৫টি চোরাই বাইক। আর চোরাকারবারির কাছ থেকেও উদ্ধার হয় কয়েক লক্ষ টাকার জাল নোট।
এপ্রিল মাসে একই ভাবে ফরাক্কা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে তেরো লক্ষ টাকার জাল নোট। গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে। নিউ ফরাক্কা বাসস্ট্যান্ডেই ক’দিন আগে ধরা পড়েছে বিহারের নালন্দার মহিলা মিনা, তার ছেলে ডাবলু কুমন ও ধুরখেলি কুমার নামে তিন কারবারি। শমসেরগঞ্জ থানা থেকেও নোটবন্দির পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের যেখানেই জাল নোটের খোঁজ মিলেছে তার সিংহভাগেরই জোগান দিচ্ছে মালদহের কালিয়াচক অথবা বৈষ্ণবনগর। করিডোর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মুর্শিদাবাদকে। ইতিমধ্যেই এই দুই জেলার সীমান্তে একাধিক জাল নোট কারবারের ঘটনায় তদন্ত ভার নিয়েছে এনআইএ। সীমান্ত থেকে আসা জাল নোট ধরতে মালদহে এনআইএ-র একটি শাখা অফিসও খুলতে হয়েছে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি নজরদারি চালিয়ে সাফল্য পেয়েছে সিআইডি, কেন্দ্রীয় রাজস্ব শুল্ক দফতরও।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘নোট বাতিলের পরে জাল নোটের রমরমা কমবে বলেই বিশ্বাস ছিল আমাদের। কিন্তু একের এক জাল নোট উদ্ধারের ঘটনার পরে দেখা যাচ্ছে, জাল নোটের কারবারের কোনও ভাটা পড়েনি। পুরনো নোট বাতিল হয়েছে। নতুন নোটও জাল করা শুরু হয়েছে।’’
জঙ্গিপুরের সরকারি আইনজীবী অশোক সাহা বলেন, ‘‘এক জাল নোট কারবারির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে জঙ্গিপুর আদালতেই। সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারক জানিয়েছিলেন, জাল টাকা যে ভাবে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে তার ফল ভুগতে হচ্ছে দেশের সবাইকে। এই অপরাধ কার্যত দেশের বিরুদ্ধেই গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত।”