‘আয়ি’র কাছেই ফিরল কিশোরী

মাহেশের রথের মেলায় আষাঢ়ে বৃষ্টিতে পথ হারিয়ে ছিল বঙ্কিমের রাধারানী। রুক্মিণীকুমারের হাত ধরে সে-যাত্রায় মায়ের কাছে ফিরেছিল সে। রুক্মিণীকুমার যে আসলে দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজা দেবেন্দ্রনারায়ন রায় সে কথা জানতে অনেক বছর লেগে যায় রাধারানীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৭
Share:

মাহেশের রথের মেলায় আষাঢ়ে বৃষ্টিতে পথ হারিয়ে ছিল বঙ্কিমের রাধারানী। রুক্মিণীকুমারের হাত ধরে সে-যাত্রায় মায়ের কাছে ফিরেছিল সে। রুক্মিণীকুমার যে আসলে দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজা দেবেন্দ্রনারায়ন রায় সে কথা জানতে অনেক বছর লেগে যায় রাধারানীর।

Advertisement

তবে সুদূর ওড়িশার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেড়াতে এসে দোল-পরিক্রমায় বেরিয়ে নবদ্বীপের পথে হারিয়ে যাওয়া ময়ূরভঞ্জের নাবালিকাকে তার ‘আয়ির’ কাছে ফেরাতে পুলিশের লেগে গেল চব্বিশ ঘণ্টা।

মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার কিছু পর। নবদ্বীপের গঙ্গার তীর সংলগ্ন উডবার্ন রোড দিয়ে সবে চলে গিয়েছে এক বিরাট পরিক্রমা। তখনও বাতাসে ভাসছে পায়ে পায়ে ওড়া ধুলো। গোলাপি আবিরে ঢাকা পথ। হঠাৎ স্থানীয় মানুষদের চোখে পড়ে এক উদভ্রান্ত কিশোরীকে। সালোয়ার কামিজ পড়া বছর চোদ্দ-পনেরোর মেয়েটি এক বার এ দিকে যাচ্ছে তো এক বার অন্য দিকে। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।

Advertisement

ঘটনাস্থলে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মলয় সাহা। তিনি বলেন, “মেয়েটির রকম দেখে সন্দেহ হয়। ডেকে কথা বলতে গিয়ে আর এক বিপদ। কী বলছে, কিছুই বুঝতে পারি না। সে এক দুর্বোধ্য ভাষা। হিন্দি-ইংরাজি কিছুই বলতে বা বুঝতে পারছিল না। জড়িয়ে বলা কথায় মধ্যে শুধু পরিক্রমা শব্দটিই বোঝা যাছিল।” তত ক্ষণে ভিড় জমেছে মেয়েটিকে ঘিরে। রাত নেমে এসেছে। সব দেখে কান্নাকাটি শুরু করে দেয় মেয়েটি। শেষ পর্যন্ত থানায় গিয়ে মেয়েটিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরা।

মেয়েটির খোঁজখবর করতে মঙ্গলবার রাতেই তৎপর হয় পুলিশ। যে সব মন্দিরে পরিক্রমা চলছে, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়। খোঁজ নেওয়া হয় যে সব পরিক্রমা ওই দিন নবদ্বীপ শহরের উপর দিয়ে গিয়েছিল, সে সম্পর্কেও। কিন্তু তেমন কোনও সূত্র না মিললেও, একটা ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়, মেয়েটি ওড়িশা থেকে এসেছে।

বেশি রাতে স্থানীয় একটি মঠ থেকে ডেকে আনা হয় দু’জন ওড়িয়া ভক্তকে। তাঁরা ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশকে জানান, মেয়েটির নাম রুজালি দাস। উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলার গোবিন্দপুর থানার কঙ্কন গ্রাম থেকে দিদিমা বৃন্দাবতীদেবীর সঙ্গে দোল উপলক্ষে নবদ্বীপে এসেছে সে।

কিন্তু কোন মঠে এসেছে, তা বলতে পারেনি রুজালি। শুধু জানায় নৌকা করে সে তার আয়ির সঙ্গে ওই মন্দিরে গিয়েছে। এই কথার উপর ভিত্তি করে বুধবার প্রথমে মায়াপুরের ইস্কন-সহ বিভিন্ন মঠে সন্ধান করা হয় রুজালির ‘আয়ি’ মায়ের। মায়াপুরে তেমন কাউকে না মেলায় পুলিশ স্বরূপগঞ্জের মঠগুলিতে খোঁজ শুরু করতেই হদিশ মেলে রুজালির দিদিমা বৃন্দাবতীদেবীর। গাদিগাছার সারস্বত গৌড়ীয় মঠে তাঁর খোঁজ মেলে। জানা যায়, ওই মঠের পরিক্রমায় বেরিয়ে দিদিমার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় নাতনির। নদিয়ার ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) মহম্মদ আজিম জানান, বুধবার রাতেই পুলিশ বৃন্দাবতীদেবীর কাছে ফিরিয়ে দেয় ওই কিশোরীকে।

রুজালিকে ফিরে পেয়ে আয়ির চোখের জল তখন থামেই না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন