ছুটিতে বড়বাবু, ধর্ষণের নালিশ নিতে তিন দিন

নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, তাঁর নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে তিন দিন ধরে থানায় ঘুরছেন তিনি। কিন্তু ফরাক্কা থানায় গিয়ে তাঁকে শুনতে হয়েছে চেনা গলায় পুলিশের সেই অমোঘ পরামর্শ— “বড় হলে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না।  ঘটনাটা জানাজানি হলে সমস্যায় পড়বেন। ও সব অভিযোগ ভুলে যান। বরং, গ্রামে বসে মিটিয়ে নিন।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০০:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

বড়বাবু ছুটিতে। সরল গলায় ডিউটি অফিসার তাই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘উনি কাজে যোগ না দিলে, নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ তো নেওয়া যাবে না।’’ কেন?

Advertisement

তিন দিন ধরে থানায় ঘুরেও তার কোনও সহজ উত্তর পাননি নাবালিকার মা-বাবা।

নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, তাঁর নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে তিন দিন ধরে থানায় ঘুরছেন তিনি। কিন্তু ফরাক্কা থানায় গিয়ে তাঁকে শুনতে হয়েছে চেনা গলায় পুলিশের সেই অমোঘ পরামর্শ— “বড় হলে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না। ঘটনাটা জানাজানি হলে সমস্যায় পড়বেন। ও সব অভিযোগ ভুলে যান। বরং, গ্রামে বসে মিটিয়ে নিন।’’

Advertisement

দিনের পর দিন থানা ফিরিয়ে দেওয়ায় মহেশপুর তাই ফুঁসছে। পুলিশের সাহায্য না-পেয়ে গ্রামবাসীরা তাই ওই অভিযুক্তের বাড়ি চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালান। গ্রামেরই কয়েকজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও ক্ষোভ কমেনি মহেশপুরে।

ফরাক্কা থানার আইসি ছুটিতে। ফরাক্কার দায়িত্বে রয়েছেন জঙ্গিপুরের সিআই উদয়শঙ্কর মণ্ডল। রবিবার সকালে ঘটনা শুনে তিনি বলেন, ‘‘এ আবার হয় নাকি!’’ তাঁর ধমকেই ফরাক্কা থানার দুই অফিসার রবিবার সকালেই ছুটে গিয়েছিলেন মহেশপুর। বাড়ি থেকে গাড়ি করে তুলে আনেন ওই নির্যাতিতা ও তার পরিবারকে। শেষতক রুজু হয় অভিযোগ।

১৯ জুলাই সকালে থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন ওই নির্যাতিতা বালিকার মা। তিনি বলেন, ‘‘বার বার চাপ দিলে পরামর্শের বদলে শুনতে হয়েছে ধমক, ‘যাও বাড়ি যাও!’’ গত বুধবার, রাতে, বাড়ির লাগোয়া মুদির দোকান থেকে ফিরছিল মেয়েটি। অভিযুক্ত বছর ৪৫ বয়সের তাজামুল শেখ তখন তাকে ডেকে নিয়ে যায় পাশেই রেজাউল শেখের পরিত্যক্ত বাড়িতে। সেখানেই তার উপর অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ। ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে, রাস্তায় বেরতেই চিৎকার শুনে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন মহিলা।

রাতে ঘটনার কথা গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজিত গ্রামবাসীরা অভিযুক্তের খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু তার দেখা মেলেনি।

নাবালিকার দাদা বলেন, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আগেও উঠেছে। দিনদশেক আগেও নির্যাতিতাকে একই ভাবে অত্যাচার করে দশটা টাকা দিয়ে বলে, বাড়িতে জানালে মেরে ফেলব।’’

গ্রামেরই বাসিন্দা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী মেহেবুব আলম বলেন, “ঘটনার পর থেকে গ্রামে এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে মানুষ। পুলিশের নীরবতা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ পেয়ে যেখানে বিশেষ পকসো আইনে মামলা রুজুর কথা, সেখানে পুলিশ তদন্ত না-করে দিন কাটাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন