ডুবে গিয়েছে সব্জি খেত।
রমজানের শুরুতে কে ভেবেছিল ঈদের আগে বাজার এতটাই বদলে যাবে!
টানা বৃষ্টির সৌজন্যে বেশ কিছু সব্জির দাম ইতিমধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে দাম আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ঈদের আগে টানা বৃষ্টি আর তপ্ত বাজার নিয়ে ক্রমশ মুখ ভার হচ্ছে দুই জেলার মানুষের।
এ বারের রমজানের শুরুতে ইফতারের অন্যতম উপকরণ ছিল নানা স্বাদের রসাল আম। দামও ছিল সকলের নাগালে। কিন্তু ঈদের দিন যতই এগিয়ে আসছে ফল থেকে সব্জি সবকিছুর দামই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আর অস্বাভাবিক এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য সকলেই দায়ী করছেন বৃষ্টিকেই।
জুন মাসের ১১ তারিখ থেকে সেই যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে মাঝে চার পাঁচ দিন বাদ দিলে তার আর থামাথামির নাম নেই। যার নিট ফল শাক-সব্জি থেকে ফলমূল সবই বাজারে আগের তুলনায় অনেক কম আসছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ঈদের মরসুমে ফল-সহ যাবতীয় খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বছরের অন্যান্য সময়ের থেকে বেশি থাকে। দামও তুলনায় একটু চড়া থাকে। কিন্তু এ বারের টানা বৃষ্টিতে ফল, কিংবা সব্জি বাজারে শুধু ঘাটতি তৈরি হয়েছে তাই নয়, দামও চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে।
নবদ্বীপের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস জানান, ২০ টাকার পটল এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। আর কয়েকদিনের মধ্যে তা ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কয়েকদিন আগেও বেগুন বিকিয়েছে ২০ টাকা কেজি দরে। এখন বেগুনের দাম ৪০ টাকা। দাম আরও বাড়বে। ১৫-২০ টাকার ফুলকপি এখন বাজারে প্রায় অমিল। যা দু’একটা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম ৪০ টাকা। কাঁচালঙ্কার দাম ২০ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে এখন দাঁড়িয়েছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা। এটা কোথায় গিয়ে থামবে কারও জানা নেই। ঝিঙে, ঢেড়স, উচ্ছের মতো সব্জির দামও বেড়েছে হু হু করে।
এ বার তীব্র গরম এবং অনাবৃষ্টির দীর্ঘ যুগলবন্দির পরে আষাঢ়ের ক’দিন আগেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন কৃষি বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ কৃষক সকলেই। অনেকগুলো বৃষ্টিহীন দিন কাটানোর পরে পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে নতুন উদ্যমে শুরু হয়ে গিয়েছিল চাষাবাদের কাজ। কিন্তু তারপর সারাদিন মেঘে ঢাকা কালো গম্ভীর আকাশ থেকে দফায় দফায় ঝরা স্বস্তির বৃষ্টি যে এ ভাবে ক্রমে অস্বস্তির কাঁটা হয়ে উঠবে তা কে জানত! জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখনও গোটা বর্ষাকাল বাকি আছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা এটাকে মোটেই ভাল লক্ষণ নয় বলেই মনে করছেন।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্যবিজ্ঞানের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান আফতাব জামান জানান, এই বৃষ্টিপাত মোটেই স্বাভাবিক নয়। আমন থেকে শাকসব্জি সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লাগাতার বৃষ্টিতে ইতিমধ্যে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সব্জি চাষিরা। মরসুমি শাকসব্জি, পটল থেকে পান কিছুই বাদ পড়েনি এই বৃষ্টির কোপ থেকে। এই পরিস্থিতিতে জীবাণুঘটিত সংক্রমণে বিপর্যস্ত ফসল। কাণ্ডে দাগ ধরা, ধসা, গোড়া পচার মতো রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
নদিয়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) বিকাশচন্দ্র বিশ্বাস জানান, জেলায় কমবেশি প্রায় সব অঞ্চলেই সব্জি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই বৃষ্টিতে। জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “এই সময়ের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ‘ভাদুই ফসল’ বলে পরিচিত সব্জি চাষ। এই সময়ে বোনা হয় এবং ভাদ্র মাস নাগাদ এই সব্জি বাজারে ওঠে। কিন্তু এ বারে ভাদুই ফসল বোনার উপযুক্ত অবস্থাই তৈরি হয়নি। টানা বৃষ্টির কারনে বাজারেও সব্জির দেখা কম মিলছে। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।” মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, বেলডাঙা, জিয়াগঞ্জ, ভগবানগোলা, সুতি, ভরতপুর ও নওদা এলাকাতে যথেষ্ট পরিমাণে সব্জি চাষ হয়। এই টানা বৃষ্টিতে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে পটল, বেগুন ও শসা চাষে। ফলে বাজারে সব্জিও আগের তুলনায় কম আসছে। আর চাহিদার সঙ্গে জোগানের ফারাক থাকায় দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি