অকাল ধারাপাতে আকাল আনাজের

নবদ্বীপে গাঁদাফুলের থেকে একটু বড় সাইজের ফুলকপি ২০-৩০ টাকা পিস। এর পর সাইজ বুঝে অবলীলায় ৪০-৪৫ টাকা দাম চাইছেন বিক্রেতা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০০:১৭
Share:

আপাতত কিছু দিন দুপুরের পাতে আলুভাজা, আলু সেদ্ধ, আলু দিয়ে মাছের ঝোল— এই চলুক। কেননা আলু থাকে হিমঘরে, বর্ষার জল লেগে তার জ্বরসর্দি হয় না, গায়ের আঁচ বাড়ে না, হাত পোড়ে না গেরস্থের। বাকি আনাজের বাড়ে।

Advertisement

এবং এখন তা এতটাই বাড়াবাড়ি যে বহরমপুরে এক আঁটি পালং বা পুনকা শাক ৫০ টাকা কেজি। ঘ্যাঁটের কুমড়োর দাম আলুর দ্বিগুণ। জ্যোতি ১০ টাকা, চন্দ্রমুখী ১৫ টাকা, কুমড়ো বিকোচ্ছে ২৫ টাকায়। ১০০ লঙ্কা ১২-১৫ টাকা ধনেপাতা ২৫-৩০ টাকা। টোম্যাটো ৮০ টাকা কেজি।

নবদ্বীপে গাঁদাফুলের থেকে একটু বড় সাইজের ফুলকপি ২০-৩০ টাকা পিস। এর পর সাইজ বুঝে অবলীলায় ৪০-৪৫ টাকা দাম চাইছেন বিক্রেতা। তার চেয়েও বড় কথা, অনেক বাজারে টাকা দিয়েও মিলছে না পর্যাপ্ত এবং ভাল মানের আনাজ। ফুলকপির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। বেশির ভাগ জমিতে এখন যেটুকু জলদি কপি আছে, এই বৃষ্টিতে দাগ ধরে গিয়েছে।

Advertisement

পুজো-টুজোর সময়ে এমনিতে বাজার একটু চড়ে। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং এলোমেলো হাওয়া শুইয়ে দিয়েছে আনাজ খেত। বহরমপুরের কাটাবাগান এলাকার চাষি শামিম আহমেদ বলেন, ‘‘বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে আনাজের মাচা ভেঙে গিয়েছে। গাছের গোড়া আলগা হয়ে কিছু মারা গিয়েছে। ফুলকপি, বাঁধাকপির পাতা পচে নষ্ট হয়েছে।’’ নতুন বাজারের আনাজের আড়়তদার সেলিম শেখ বলেন, ‘‘ফলনে ঘাটতি, দাম বাড়ছে তার ফলে।’’ বেলডাঙা বাজারের আনাজের খুচরো বিক্রেতা সুরেন মণ্ডল বলেছেন, ‘‘আনাজের মানও কমে গিয়েছে বৃষ্টির কারণে।’’

বেজার মুখে বাজার-পথে

নবদ্বীপ

সিম ১৫০ টাকা প্রতি কেজি

কাঁচালঙ্কা ৮০-১০০ টাকা

টোম্যাটো ৮০-১০০ টাকা

বাঁধাকপি ৫০-৬০ টাকা

পালং শাক ৪০-৫০ টাকা

মদনপুর

বরবটি ৭০ টাকা প্রতি কেজি

কাঁচালঙ্কা ১০০ টাকা

টোম্যাটো ৮০ টাকা

বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা

পালং শাক ৫০ টাকা

কৃষ্ণনগর

পটল ৪০ টাকা প্রতি কেজি

ঢেঁড়শ ৩৫-৪০ টাকা

বেগুন ৩৫-৪০ টাকা

বাঁধাকপি ৪০-৪৫ টাকা

পালং শাক ৬০ টাকা

করিমপুর

পটল ৩৫ টাকা প্রতি কেজি

টোম্যাটো ৭০ টাকা

পেঁয়াজ ৫০ টাকা

বাঁধাকপি ৩৫-৪০ টাকা

পালং শাক ৪০-৪৫ টাকা

মদনপুরের চাষি নারায়ণ ঘোষ আর করিমপুরের বিশ্বনাথ বিশ্বাসের মতে, এমন মরসুম সচরাচর দেখা যায় না। নারায়ণ সাড়ে চার হাজার জলদি জাতের কপিচারা বুনেছিলেন। দু’টি বৃষ্টিতে প্রায় হাজার গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সরাটির নূর ইসলাম মণ্ডল বলেন, “এখন জমির যা অবস্থা তাতে ‘জো’ আসতে (চাষের উপযুক্ত হতে) কমপক্ষে দিন পনেরো লেগে যাবে। তার পরে নতুন করে ফসল বাজারে আসতে আরও কয়েক সপ্তাহ।”

মদনপুরের পাইকারি আনাজ বিক্রেতা হাসেম মণ্ডল বলেন, “আমি নিজে হাটে এবং সরাসরি চাষিদের থেকে আনাজ কিনি। কিন্তু আমাদের এই চত্বরে আনাজ নেই। একশো কুইন্ট্যাল পটল দরকার। আমি মাত্র ২০ কেজি জোগাড় করতে পেরেছি। দর তো আয়ত্তের বাইরে যাবেই।”

নদিয়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা রঞ্জন রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, “বেশি বৃষ্টি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ জেলার বেশির ভাগ অংশে চাষিরা জলদি জাতের আনাজ আগেই কেটে নেওয়ায় ততটা ক্ষতি হয়নি। একশ্রেণির মানুষ চাষির কাছ থেকে আনাজ কিনে অবস্থার সুযোগ নিচ্ছেন।” মুর্শিদাবাদের উপ- অধিকর্তা তাপসকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘এখন যেমন ঝলমলে রোদ উঠছে, এমনটা চললে আর কয়েক দিনের মধ্যে শীতকালীন আনাজের জোগান এসে যাবে। তখন দামও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এই অবস্থাটা থাকবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement