ভাঁড়ার শূন্য, জলাতঙ্কের টিকার আকাল জেলা জুড়েই 

হরিপুর থেকে তাঁকে আসতে হচ্ছে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। এতে শুধু তাঁর হয়রানি হচ্ছে তা-ই নয়, সে দিনের মজুরি নষ্ট হচ্ছে। এত দূর পথ উজিয়ে হাসপাতালে এসেও কিন্তু সুরাহা হয়নি। কর্তৃপক্ষ অসহায়ের মত তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, নাম লিখে রাখা হল, টিকা এলেই তাঁকে ডেকে দেওয়া হবে

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

সাত দিন ধরে মানুষটা ঘুরছে জলাতঙ্ক প্রতিরোধকারী টিকা বা ‘অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন’-এর জন্য। পেশায় দিনমজুর। দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থা। বাইরে থেকে সেই ইঞ্জেকশন কেনার ক্ষমতা তাঁর নেই।

Advertisement

হরিপুর থেকে তাঁকে আসতে হচ্ছে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। এতে শুধু তাঁর হয়রানি হচ্ছে তা-ই নয়, সে দিনের মজুরি নষ্ট হচ্ছে। এত দূর পথ উজিয়ে হাসপাতালে এসেও কিন্তু সুরাহা হয়নি। কর্তৃপক্ষ অসহায়ের মত তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, নাম লিখে রাখা হল, টিকা এলেই তাঁকে ডেকে দেওয়া হবে। এমন করে প্রতিদিনই জেলার প্রায় প্রতিটা হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে কুকুর, বিড়াল, বাঁদর, বেজি বা অন্য প্রাণীর কামড়ে আহত রোগীরা। কারণ, নদিয়া জুড়ে সরকারি হাসপাতালগুলিতে ‘অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন’-এর আকাল। অনেক হাসপাতাল তাই বাধ্য হয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়ে জানিয়েছে, টিকা দেওয়া যাবে না। শুধুই কি তাই? যাঁরা ইতিমধ্যে টিকার কোর্স শুরু করেছেন তাঁরাও পরবর্তী টিকা সময়মতো পাবেন কিনা সে সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেকেরই কোর্স মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, “গোটা জেলাতেই এই টিকার ভাঁড়ার শূন্য। ফলে, কোনও হাসপাতালেই তা পাঠানো যাচ্ছে না।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর নদিয়া জেলায় কুকুর ও অন্য প্রাণীর কামড়ে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৬ হাজার। যে পরিমান টিকা স্বাস্থ্য দফতর পাঠিয়েছে তা দিয়ে মোট প্রায় ২৭ হাজার রোগীর চিকিৎসা করা গিয়েছিল। এ বছর সেই সংখ্যাটা এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৪ হাজারের মতো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতর যে টিকা পাঠিয়েছে তাতে ৫১০০ জন রোগীর চিকিৎসা সম্ভব।

শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত বিশ্বাস বলছেন, “‘অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন’ পাচ্ছি না। ১১৫ দিন ধরে টিকার ভাঁড়ার শূন্য। ফলে রোগীদের ফিরতে হচ্ছে।’’ একই কথা বলছেন রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ সরকার। তাঁর কথায়, “প্রচুর মানুষের নাম লেখানো আছে। নতুন নতুন রোগী আসছেন।”

Advertisement

কিন্তু কেন এমন অবস্থা? জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, ‘‘টিকা সরবরাহকারী সংস্থার উৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যার কারণেই এই আকাল।’’ নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলছেন, “স্বাস্থ্য দফতর থেকে ‘অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন’ পাচ্ছি না। মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে স্থানীয় ভাবে রোগী কল্যাণ সমিতির টাকায় বাইরে থেকে টিকা কেনা হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন