পুলিশ থেকেও নেই, উদ্বিগ্ন ডন বস্কো পাড়া

রানাঘাটের কনভেন্টে ডাকাতি ও বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে দশ দিন। এখনও পর্যন্ত দুষ্কৃতীরা অধরা। পুলিশ, সিআইডি হয়ে তদন্তভার এখন সিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু তারপরেও ওই ঘটনার কিনারা তো হয়ইনি, উল্টে ওই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০১:১৭
Share:

চলছে বাতি লাগানোর কাজ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

রানাঘাটের কনভেন্টে ডাকাতি ও বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে দশ দিন। এখনও পর্যন্ত দুষ্কৃতীরা অধরা। পুলিশ, সিআইডি হয়ে তদন্তভার এখন সিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু তারপরেও ওই ঘটনার কিনারা তো হয়ইনি, উল্টে ওই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এমন একটি ঘটনার পরে কতটা নিরাপদ রানাঘাটের বৈদ্যপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ডন বস্কোপাড়া এলাকা?

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা সমস্বরে জানাচ্ছেন, “এতদিন ভাবতাম এই এলাকা নিরাপদ। তেমন কোনও ঘটনা ঘটে না। কিন্তু দিনকয়েক আগে যা ঘটে গেল তারপর থেকে সন্ধ্যার পরেই ভয়ে বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারছি না। দিনের বেলাতেও বাড়ির মূল গেটে তালা মেরে রাখছি।” গত রবিবার থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে বাড়ির সামনে আলো জ্বালানোরও ব্যবস্থা করছেন। সোমবার থেকে সেই কাজ শুরুও হয়েছে।

ডন বস্কোপাড়া থেকে রানাঘাট থানার দূরত্ব বড়জোর দেড় কিলোমিটার। অথচ ডন বস্কোপাড়া যে থানার অর্ন্তগত সেই গাংনাপুর থানা ওই এলাকা থেকে প্রায় চোদ্দো কিলোমিটার দূরে। বাড়ির কাছে রানাঘাট থানা বাদ দিয়ে এই এলাকাকে দূরের গাংনাপুরের অর্ন্তগত করা নিয়ে প্রথম থেকেই এলাকার মানুষের ক্ষোভ ছিল। কোনও ঘটনা ঘটলে বা কোনও অভিযোগ জানাতে গেলে দুই থানাই দায় এড়াতে চায় বলেও অভিযোগ। তারপরে ওই কনভেন্টের ঘটনার পরে পুলিশের উপরে আর আস্থা রাখতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা। তাই ন্যূনতম নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করছেন নিজেরাই। সোমবার যেমন বাড়ির সামনে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা কাকলি বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “বাড়ির সামনেই ওই আলোর ব্যবস্থা করেছিল স্থানীয় পঞ্চায়েত। তবে বহুদিন তেকেই ওটা খারাপ হয়ে পড়েছিল। সন্ধ্যার পরেই বাড়ির সামনেটা অন্ধকারে ডুবে যায়। কনভেন্টের ঘটনার পর আর কোনও ঝঁুকি না নিয়ে নিজেই পয়সা খরচ করে আলোর ব্যবস্থা করে ফেললাম। এলাকায় যা শুরু হয়েছে তাতে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি নিজে না দেখলে আর কে দেখবে!” স্থানীয় বাসিন্দা শম্পা বিশ্বাসও পিছিয়ে নেই। তাঁর বাড়ির দরজায় অ্যালুমিনিয়ামের প্লেট লাগাচ্ছেন। শম্পাদেবী বলেন, “নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ সব করছি।” আর এক বাসিন্দা শ্বেতা গোমসের কথায়, “ওই ঘটনার পর থেকেই সবসময় একটা ভয় তাড়া করছে। দিনের বেলাতেও বাড়িতে তালা লাগিয়ে রাখছি।”

Advertisement

যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের এমন অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এমন অভিযোগ ঠিক নয়। ওই এলাকায় পুলিশি টহল চলে। পাশের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কেও পুলিশ থাকে। ফলে ভয়ের কিছু নেই।” তাহলে দশ দিন আগে ওই কনভেন্টে এমন ঘটনা ঘটল কী করে? সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।

এ দিন সিআইডির কয়েকজন আধিকারিক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন ও রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীর মেডিক্যাল রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। স্কুল লাগোয়া বেশ কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে কথাও বলেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন