রানাঘাট শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টুকটুকি ও টুনটুনি (ডান দিকে)।
সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বছর ষাটেকের হরিদাস বণিক। আচমকা এক টুকটুকি এসে ধাক্কা মারে তাঁকে। মাটিতে পড়ে যান তিনি। কিন্তু চালক তা তোয়াক্কা না করেই টুকটুকি নিয়ে পালিয়ে যান। এলাকার মানুষজনই তাঁকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান।
হরিদাস বলেন, “সে দিনের কথা মনে পড়লে আজও শিউরে উঠি। ধাক্কা মেরে টুকটুকি চালক ফিরেও তাকাল না। রাস্তা দিয়ে চলা করা খুব দুশ্চিন্তার হয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই।’’
টুকটুকির দাপটে রানাঘাটে নাভিশ্বাস উঠছে পথচারীদের। দোসর হয়েছে টুনটুনি। রানাঘাটে যে দিকেই তাকানো যায়, মেশিনচালিত তিন চাকার ওই রিকশার দাপাদাপি।
পুরবাসীদের অভিযোগ, একটু অসতর্ক হলেই গায়ের উপর এসে পড়ছে টুকটুকি-টুনটুনি। কিছু বলতে গেলে জুটছে গালিগালাজ-হুমকি। মুখ বুজে সয়ে যাওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহর ও তার আশপাশের গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে রোজ হাজার তিনেক টুকটুকি শহরে ঢোকে। শহরেই রয়েছে শ’পাঁচেক টোটো। কয়েকটি জায়গায় তাদের দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হলেও, খুব কম ক্ষেত্রে তা মানা হয়। রাস্তায় যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। গাড়ির যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে। ফলে মোড়ে মো়ড়ে যানজট লেগেই আছে।
সমস্যা যে হচ্ছে তা মানছেন টুকটুকি-টুনটুনি চালকেরাও। টুকটুকি চালক মজিদ মণ্ডল জানান, এক সময় টুকটুকি চালিয়ে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা রোজগার হয়েছে। দিনে খরচ ২০০ টাকা। এখন সারাদিন কাজ করে দিনের শেষে ২০০-৩০০ টাকা রোজগার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। টুকটুকির সংখ্যা বাড়ায় প্রতিযোগিতা বেড়েছে। সবাই চাইছেন বেশি করে যাত্রী তুলতে। তা করতে গিয়ে কেউ কেউ বেপরোয়া হয়ে যান। যা হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘‘মানুষকে নিয়ে আমাদের চলতে হয়। তাই তাঁরা সমস্যায় ফেলে কিছু করা উচিত নয়।’’
টুনটুনি চালক আলোক মণ্ডল বলেন, ‘‘রিকশা চালিয়ে সংসার টানা যাচ্ছিল না। এখন টুনটুনি চালিয়ে খানিক আয় হচ্ছে। সবসময় চেষ্টা করি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে গাড়ি চালাতে। অনেকে আমাদের দোষারোপ করছে। কিন্তু কিছু করার নেই। কিছু চালকের জন্য এটা আমাদের তা শুনতে হয়।”
রানাঘাটের টুকটুকি স্ট্যান্ডের সম্পাদক দীপক দত্ত বলেন, “পুরসভার অনুমতি নিয়ে শহরে শ’পাঁচেক টোটো চলছে। অনুমতি ছাড়াই চলছে শ’দেড়েক টোটো। তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আশপাশের এলাকা থেকে টোটো শহরে ঢুকছে। তাতেই সমস্যা হচ্ছে। সমস্যার কথা পুরপ্রধানকে জানিয়েছি।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে রানাঘাট শহরের পুরপ্রধান পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাইরে থেকে আসা টোটোর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তার জন্য কয়েকটি রাস্তাকে ওয়ান ওয়ে করে দেওয়ার ভাবনা চিন্তা নেওয়া হয়েছে।”
রানাঘাটের মহকুমাশাসক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “সমস্যা সমাধানের জন্য পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”