অসুরনাশিনী: কার্নিভালের একটি মুহূর্ত। সোমবার রানাঘাটে। নিজস্ব চিত্র
কলকাতার ছোঁয়াচ লাগছে ছোট শহর-মফস্সলেও। রেড রোড থেকে একেবারে রানাঘাট!
থিম পুজো তো কবেই চালু হয়ে গিয়েছে। এ বার হয়ে গেল রানাঘাটে শুরু হল ‘দুর্গাপুজো কার্নিভাল’। চমক আছে উদ্যোগে।
একের পর এক পুজো কমিটির দল নিয়ে শোভাযাত্রা। কারও গলায় আগমনী গান, কারও ধামসা-মাদল, সাঁওতালি নাচ, মনসুর ফকিরের গান, কীর্তন, ময়ূরপঙ্খী, রাইবেঁশে নাচ।
সোমবার বিকেলে ৪টেয় রানাঘাট পুরসভার উদ্যোগে রানাঘাট কলেজ থেকে কার্নিভাল শুরু। সেখান থেকে দক্ষিণপাড়া মোড় হয়ে বড়বাজার চূর্ণি নদীর ঘাটে গিয়ে শেষ। দক্ষিণপাড়া মোড়ে বিচারক এবং বিশিষ্টজনদের বসার জায়গা।
উদ্যোক্তা তৃণমূল পরিচালিত রানাঘাট পুরসভা। ফলে কার্নিভালের পিছনে সরকারি ঢক্কানিনাদের ছায়াও রয়েছে। বলেই দেওয়া হয়েছিল, যোগ দিতে আসা পুজো কমিটিগুলিকে তিনটি করে বিষয় দেখাতে হবে। তার মধ্যে একটিতে দেখাতেই হবে রাজ্য সরকারের সাফল্য। ফলে কার্নিঊালে কন্যাশ্রী থেকে সবুজ সাথী, সবেরই দেখা মিলেছে। বাকি দু’টি বিযয় যার-যার খুশি মতো।
গত কয়েক দিন ধরেই প্রচার তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ফলে দুপুর ৩টে থেকেই রাস্তার দু’ধারে ২০টি ওয়ার্ডের দর্শকরা ভিড় করেছিলেন। কাউন্সিলারেরা তো ছিলেনই। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও হাজির ছিলেন। কিন্তু শোভাযাত্রা যত বড় হবে বলে প্রথমে ভাবা গিয়েছিল, ততটা হয়নি। সম্ভবত প্রথম বছর বলেই মাত্র দশটি পুজো কমিটি যোগ দিয়েছে। শুরুতেই ছিল ভাঙরাপাড়া-সিদ্ধান্তপাড়া। তার পর একে-একে মধ্যপল্লি, পাইকপাড়া ব্রতী সঙ্ঘ, রানাঘাট ক্রিকেট অ্যান্ড অ্যাথলেটিক ক্লাব, চারের পল্লি, সিদ্ধেশ্বরীতলা সর্বজনীন, স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশন, তালপুকুরপাড়া, দে-চৌধুরীপাড়া এ্যাথলেটিক ক্লাব, শ্রীরামকৃষ্ণ স্মারক সমিতি।
রানাঘাট শহরে অনুমোদিত পুজো মোট ৭২টি। পুরপ্রধান পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা শহরের সব পুজো কমিটিকেই কার্নিভালে যোগ দিতে ডেকেছিলাম। দশটিকে নিয়ে পথচলা হল।” কার্নিভালের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের গুণগান করা হল না আসলে? পার্থবাবুর বক্তব্য, “তা কেন? গত বার কলকাতার রেড রোডে যে কার্নিভাল হয়েছিল, তারই অনুকরণে এটা করা হয়েছে।”
বেশির ভাগ পুজো কমিটিগুলো যোগ দিল না কেন?
একটা অন্যতম কারণ: বাড়তি খরচ। বড়বাজার হ্যাপি ক্লাবের পুজো কমিটির তরফে বিকশ মজুমদার যেমন বলেন, “অনেক কষ্ট করে, নিজেরা চাঁদা দিয়ে আমরা পুজো করি। কমবেশি লাখ টাকা খরচ করে শোভাযাত্রা করার ক্ষমতা নেই।”
তবে বিকেলে রাস্তার ধারে জড়ো হওয়া অনেকেই কার্নিভাল দেখে বেশ ফূর্তিতে। বাবন মুখোপাধ্যায়, সমীর দাস, আশিস বিশ্বাসের মতো অনেকে বলছেন, “রেড রো়ড-টোড জানি না। তবে এ অনেকটা শান্তিপুরের রাসের মতো। আশা করি, পরের বাপ আরও বড় করে হবে।”