জোর করে ঘরে ঢোকা, ধর্ষণ, খুনের হুমকি— পড়শি যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা বেশ দীর্ঘ।
শনিবার রাতে সাগরদিঘি থানায় লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন নির্যাতিতা। তার পরেও পুলিশ ধরতে পারেনি অভিযুক্ত যুবক রাকিব শেখ ওরফে আওলাদকে। অভিযোগ, উল্টে সে ও তার পরিবারের সদস্যরা ‘কেস’ তুলে নেওয়ার জন্য নাগাড়ে হুমকি দিচ্ছিল নির্যাতিতাকে।
তরুণীর পরিবারের দাবি, ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে সিঁটিয়েই ছিল। তার পরে ওই হুমকির চাপ আর সহ্য করতে পারেননি। মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বছর তেইশের ওই তরুণী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি এখন সাগরদিঘি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু ওইটুকুই! এ দিন রাত পর্যন্ত তারা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সাগরদিঘি থানার দায়িত্বে থাকা প্রশিক্ষণরত আইপিএস উমেশ খানাদবাহালে বলছেন, ‘‘অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি তো চলছে।’’
যা শুনে আকাশ থেকে পড়ছেন গ্রামের লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, তল্লাশি তো দূরের কথা, ঘটনার পর থেকে গ্রামে একবারের জন্যও পুলিশ আসেনি। অথচ রাকিব প্রকাশ্যে এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু পুলিশই তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।
পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন ওই তরুণীর আত্মীয় তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা আসাদুল হকও। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ ঠিক কী কারণে এ ভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকল সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশ সক্রিয় হলে কিছুতেই এমন ঘটনা ঘটত না। এর দায় কে নেবে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর স্বামী পেশায় রাজমিস্ত্রি। কর্মসূত্রে তিনি কলকাতায় থাকেন। বাড়িতে তিন নাবালক সন্তান, শাশুড়ি ও ননদকে নিয়ে থাকেন ওই তরুণী। শুক্রবার রাতে তিন সন্তানকে নিয়ে এক ঘরে শুয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, রাকিব ঘরে ঢুকে ওই তরুণীর গলায় ছুরি ধরে তাঁকে ধর্ষণ করে।
ওই তরুণীর শাশুড়ির দাবি, ‘‘রাত ১১টা নাগাদ বৌমার চিৎকারে বেরিয়ে আসি। তখন বিদ্যুৎ ছিল না। দেখি, ঘরের ভাঙা জানলা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে রাকিব। ওকে ধরতে গেলে আমার মুখে ঘুষি মেরে পালায়।”
বাড়িতে হইচই শুনে পড়শিরাও চলে আসেন। রাতেই ডাকা হয় অভিযুক্ত রাকিবের বাবাকে। সকলেই আশ্বাস দেন, পরের দিন সকালে অভিযুক্তকে নিয়ে বসে একটা সালিশি হবে। খবর পেয়ে চলে আসেন ওই তরুণীর স্বামী ও বাবা-মা।
পরের দিন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও এলাকার কেউ কোনও পদক্ষেপ করে না। সেই রাতেই ওই তরুণী তাঁর স্বামীর সঙ্গে থানায় গিয়ে রাকিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তার পর থেকেই রাকিব ও তার পরিবারের সদস্যেরা ওই তরুণীর স্বামী ও সন্তানদের খুনের হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ।