শহিদ বেদীতে পড়েছে মালা। —নিজস্ব চিত্র
গণহত্যার রজতজয়ন্তী বর্ষের সূচনায় স্মৃতি আঁকড়ে ধরল হরিহরপা়ড়া।
বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ শহিদ বেদীতে মাল্যদান করে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তার পরে নীরবতা পালন। সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন হরিহরপাড়া নাগরিক কল্যাণ পরিষদের মূখ্য উপদেষ্টা মদন সরকার এবং কর্তা নিয়ামত হোসেন । অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হরিহরপাড়ার চোঁয়ার বাসিন্দা, গুলিতে নিহত সচ্চিদানন্দ পালের স্ত্রী জ্যোতিলক্ষ্মী পাল। সঙ্গে ছিলেন সচ্চিদানন্দ বাবুর ছোট ভাই পঞ্চানন পাল ও ছেলে শেখর পাল। এক ঘণ্টা চলে এই অনুষ্ঠান।
আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে রাজনৈতিক মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে ক্রমশ জনমত গড়ে উঠছিল। ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলা হয় হরিহরপাড়া নাগরিক কল্যাণ পরিষদ। তাতে সিপিএম ছাড়া প্রায় সব দলের লোকেরা সামিল হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ২ নভেম্বর গণ আইন অমান্যের ডাক দেয় পরিষদ। হাজার হাজার মানুষের মিছিল এগিয়ে যায় ব্লক অফিসের দিকে। সামনে ছিলেন নেতারা। ব্লক অফিসের ঠিক আগে রাস্তা আটকে দেয় পুলিশ। গোলমালে ভিড় থেকে ছোড়া ইট গিয়ে লাগে এক ইফআর জওয়ানের গায়ে। এর পরেই লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। গুলি চলতে থাকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান চার জন। জখম তিন জনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে।
সেই দিনটিকে মনে রেখেই শহিদ স্মরণের আয়োজন হয়েছিল এ দিন। দুপুর পৌনে ৩টেয় শহিদ বেদীর সামনে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। কল্যাণ পরিষদের মতে, দুপুর ৩টে ৫ মিনিটে পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করেছিল। সাত জন শহিদের স্মৃতিচারণের আগে ঠিক ওই সময়ে নীরবতা পালন করা হয়। পরে পরিষদের কর্তারা মাইকে ঘোষণা করেন, আগামী ২৬ নভেম্বর হরিহরপাড়া হাইস্কুলে নাগরিক কল্যান পরিষদের কমিটির পুনর্গঠন করে ‘রজতজয়ন্তী বর্ষ কমিটি’ গঠন করা হবে।
পরিষদের প্রথম কমিটি গঠিত হয়েছিল ১৯৯২-এর ১৪ ফেব্রয়ারি, হরিহরপাড়ার প্রভাত সঙ্ঘের মাঠে। তা কার্যকর হয় ২০ ফেব্রুয়ারি। সেই দিনটিকে মাথায় রেখে আগামী বছর ২০ ফেব্রুয়ারি ওই মাঠেই নাগরিক কনভেনশন হবে। পরে ব্লকের পাঁচটি জায়গায় আঞ্চলিক কনভেনশন হবে। জায়গাগুলি হল মিয়াঁরবাগান, চোঁয়া, রুকুনপুর, স্বরূপপুর ও হরিহরপাড়া। হরিহরপাড়ায় মূল অনুষ্ঠান হবে আগামী বছর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর। সেখানেই আন্দোলনের স্মারক সংখ্যা প্রকাশিত হবে। মুখ্য উপদেষ্টা মদন সরকারের লেখা বই ‘সাত শহিদের দেশে’ও প্রকাশিত হবে সেখানেই। সঙ্গে থাকবে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠান।
এ দিন বক্তারা অভিযোগ করেন, সে দিনের ঘটনায় তাঁদের অনেককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিল সরকার। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে বহরমপুর আদালতে তার বিচার শুরু হতে চলেছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির পরে মামলা প্রত্যাহার, মৃত ও জখমদের ক্ষতিপূরণ ও দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবি নিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এক লক্ষ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে মুখ্যমন্ত্রীকে জমা দেওয়া হবে। এ দিন অনুষ্ঠানে ছিলেন গুলিতে জখম হওয়া চোঁয়া পাঠানপাড়ার গোলাম খান, রুকুনপুরের মিনারুল শেখ, নিহত আলতাফ হোসেনের বাবা সৈয়দ আলি। মদনবাবু বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে মামলা লড়ব। প্রয়োজনে জেলার মানুষের কাছে সহযোগিতা চাইব।’’