স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এটা আবেদন। ভুক্তভোগীদের পাল্টা দাবি, কীসের আবেদন? ও তো ফতোয়া!
কথাটা যে নিছক কথার কথা নয়, গত অক্টোবরে কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে তার প্রমাণও মিলেছিল। এমন ‘আবেদন’ প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল এক মহিলার। সেই ঘটনার পরে রাজ্য জুড়ে হইচইও বড় কম হয়নি।
কিন্তু, রক্তের সঙ্কট থেকে রেহাই পেতে সরকারি হাসপাতালগুলির সামনে যে অন্য রাস্তাও বিশেষ খোলা নেই তা-ও কবুল করছেন স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ। তাই সেই পুরনো ব্যবস্থাই ফিরছে নতুন মোড়কে।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, রোগীর আত্মীয়দের কাছে আবেদন করা হবে, যাঁরা রক্ত নেবেন, তাঁদের বাড়ির লোকেরা যদি কেউ রক্ত দেন। তার জন্য আরামদায়ক ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ব্লাডব্যাঙ্কগুলিতে রক্ত নেওয়ার জন্য আরামদায়ক চেয়ারের পাশাপাশি রক্ত দেওয়ার পরে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, এ ভাবেই লোকজন অভ্যস্ত হয়ে উঠলে রক্তের সঙ্কট এড়ানো যাবে। এ ভাবে রক্ত সংগ্রহ করে পথ দেখিয়েছিল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল। ৩০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রায় সারা বছরই ৪০০ রোগী ভর্তি থাকে। ফলে রক্তের আকাল ছিল রোজনামচা।
চিকিৎসকদের দাবি, সেই হাসপাতালেই গত ৩ বছরে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ ব্যাগ করে রক্ত মজুত থাকে সব সময়েই। নির্বাচন, দুর্গাপুজো, ভরা গ্রীষ্মেও কোনও দিন রক্তের সমস্যা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রক্তের আকাল মেটাতে চালু করা ‘গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি’ই আটকে দিতে পেরেছে রক্ত নিয়ে দুর্ভাবনা।
এ মাসের প্রথম দিকে নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জেলার সমস্ত ব্লাড ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত নির্দেশ পাঠিয়ে জানিয়েছিলেন, রোগীর আত্মীয়েরা যাতে রক্তের বদলে রক্ত দিতে পারে, তার জন্য আরামদায়ক পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল, নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সেই পরিকাঠামো তৈরি করে রক্ত নেওয়া শুরুও করে দিয়েছে।
মুখ্য মন্ত্রীর নির্দেশে থানা, পুরসভা এবং শাসক দল রক্তদান শিবির করায় এই মুহূর্তে রক্তের প্রয়োজন বিশেষ নেই। মজুত রক্ত ফুরোলে সঙ্কট যে ফের শুরু হবে তা জানেন স্বাস্থ্য কর্তারা। সেই জন্যই এমন আকর্ষক পরিকাঠামো। শক্তিনগর হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “প্রথম দিকে তেমন ভাবে সাড়া না মিললেও এখন কিন্তু দিনে চার-পাঁচ জন করে রক্ত দিতে শুরু করেছেন।’’ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলছেন, “মানুষ রক্ত দিয়ে রক্ত নেওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়লে আর তেমন সমস্যা থাকবে না।” তবে কল্যাণীর জেএনএম অবশ্য পুরনো পথে ফিরতে নারাজ। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘ব্যাপারটা তো বেআইনি। তা ছাড়া ওই কারণে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছিল।’’