বিপদ জেনেও আইন অমান্যই অভ্যাস

মোটরবাইক ছুটছিল হাওয়ার বেগে। উল্টো দিক আসা বাইকের গতি ধীর। চালকের মুখ থমথমে। ধীর গতির হেডলাইট-ইশারায় হাত  পড়ে ডিস্কব্রেকে।  হাওয়ার বেগ কমে। দু’জনের কারও মাথাতেই হেলমেট নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৮
Share:

হেলমেটহীন আরোহীকে ধরলেন যমরাজবেশী পুলিশ। ছবি গৌতম প্রামাণিক

মোটরবাইক ছুটছিল হাওয়ার বেগে। উল্টো দিক আসা বাইকের গতি ধীর। চালকের মুখ থমথমে। ধীর গতির হেডলাইট-ইশারায় হাত পড়ে ডিস্কব্রেকে। হাওয়ার বেগ কমে। দু’জনের কারও মাথাতেই হেলমেট নেই।

Advertisement

—কী ব্যাপার দাদা?

—অন্য পথে যান। বাইক ধরছে।

Advertisement

—থ্যাঙ্ক ইউ দাদা, বড় বাঁচালেন!

বহরমপুর থেকে বড়ঞা, জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুর, কান্দি থেকে কাগ্রাম— রাস্তায় পুলিশ দেখলেই মুহূর্তে মুখে মুখে সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। বড় রাস্তা থেকে অলিগলি সবাই সবাইকে সাবধান করেন—পুলিশ গাড়ি ধরছে!

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘এই পারস্পরিক বোঝাপড়টা যদি হেলমেট পরা নিয়ে থাকত! তা হলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দু’টোই অনেক কমে যেত। মাথা বাঁচানোর জন্যই হেলমেট। আর সেটা যাতে সকলে পরেন সেই কারণেই আইন। এই সহজ বিষয়টা বোঝাতে আরও কত দিন লাগবে কে জানে!’’

হেলমেট না পরলে সেই বাইক-আরোহীকে পেট্রোল পাম্প জ্বালানি দেবে না— বছর তিনেক আগে এমনই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই ব্যবস্থা কলকাতায় ও পরে জেলায় চালু হয়। পেট্রল পাম্পগুলিতে সেই বার্তা দিয়ে টাঙিয়ে দেওয়া হয় ফ্লেক্স, ফেস্টুন।

তার পর থেকে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ নিয়ে প্রচারের অন্ত নেই। পালিত হচ্ছে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ। মাথায় হেলমেট তুলে দিতে গাঁধীগিরি, গোলাপ-চকলেট-মিষ্টি বিতরণ, মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া, দুর্ঘটনার কথা শুনিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার— চেষ্টা চলছে সমানে। প্রথম দিকে পাম্পে পেট্রল নেওয়ার জন্য অনেকে হেলমেট পর্যন্ত ভাড়া করেছেন।

কিন্তু তার পরেও বহু বাইক চালক ও আরোহীর মাথায় হেলমেট ওঠেনি। রোদে-জলে রং হারিয়েছে পেট্রল পাম্পের ফ্লেক্স-ফেস্টুনও। হেলমেট ছাড়াই দিব্যি বিকোচ্ছে পেট্রল।

আবার যাঁরা হেলমেট পরছেন তাঁরাও কি সত্যিই নিজেদের সুরক্ষার জন্য হেলমেট পরছেন, নাকি নিয়মরক্ষার জন্য? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা হেলমেট পরেন তাঁদের একাংশ নিয়মরক্ষার জন্য কম দামি কিংবা হাফ-হেলমেট পরেন। আবার চালক হেলমেট পরলেও বহু আরোহী হেলমেট পরছেন না। তার যা ফল হওয়ার তা-ই হচ্ছে।

গত কয়েক মাসে জেলার বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, বাইক থেকে পড়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোট লাগে মাথায়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলেই মারা যান অনেকে। মাথায় হেলমেট থাকলে সেই বিপদ এড়ানো যেত। সে কথা হেলমেটহীন বাইক চালকেরাও জানেন। কিন্তু মানেন না। নইলে কেউ বলতে পারেন, ‘‘হেলমেট পরলে চুলের ভাঁজ নষ্ট হয়ে যায় যে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন