ইদে সেরা উপহার মেহনতের রাস্তা

লালরঙা ইটের রাস্তা দেখে চেনার উপায় নেই এখানেই মুখ হাঁ করে বসেছিল নদী। হয়তো গিলেই খেত। কিন্তু গাঁয়ের লোকেদের কাছে আপাতত হার মেনেছে ভাগীরথী।

Advertisement

বিমান হাজরা

বৈকুণ্ঠপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৫
Share:

ধসে যাওয়া সেই রাস্তা(বাঁ দিকে), ডান দিকে, রাস্তা সারাইয়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

লালরঙা ইটের রাস্তা দেখে চেনার উপায় নেই এখানেই মুখ হাঁ করে বসেছিল নদী। হয়তো গিলেই খেত। কিন্তু গাঁয়ের লোকেদের কাছে আপাতত হার মেনেছে ভাগীরথী।

Advertisement

গত ছ’মাসে যেখানে পা পিছলে কেউ জখম হয়েছেন কেউ কোথাও বা অন্ধকার রাতে রাস্তা দেখতে না পেয়ে গাড়ি নিয়ে গড়িয়ে পড়েছেন প়ঞ্চাশ ফুট নীচে গড়িয়ে গিয়েছে গাড়ি। সেখানেই এখন গড়গড়িয়ে চলছে টোটো, মোটরবাইক।

সাড়ে তিনশো গাড়ি ভাঙা ইট আর গ্রামবাসীদের মেহনতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সড়ক পথ ফের জুড়ছে। আর তাই দেখে মুখে হাসি ফুটেছে রঘুনাথগঞ্জের বৈকুন্ঠপুরের। ইদের দিনে পথ পেরিয়েই ইদগাহে নমাজ সেরেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এ বারের ইদে আমাদের কাছে এটাই সেরা উপহার।’’

Advertisement

বছর আটেক আগে রঘুনাথগঞ্জের সঙ্গে আজিমগঞ্জের যোগাযোগকারী ওই ৩৯ কিলোমিটার লম্বা সড়কটি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি হয়। বছর কয়েক আগে একবার ধসে পড়ে এই এলাকা। তখনই বাঁধানো হয় স্পার।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রায় দেড়শো মিটার এলাকা জুড়ে ধস নামে। ভাগীরথীতে একটু একটু করে তলিয়ে যায় ১৫ ফুট চওড়া পাকা সড়ক। বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছিল খান বিশেক বাড়ি। আতঙ্কে ছিলেন পরিবারগুলি। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। চরম নাকাল হতে হয় কয়েকশো গ্রামবাসীকে।

রাস্তাটি সারানোর জন্য পঞ্চায়েত থেকে সেচ দফতর, স্থানীয় প্রশাসন থেকে গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ দফতর, সব দরজায় কড়া নেড়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এ দিকে, রাস্তায় ধস নামায় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল সাগরদিঘি ও রঘুনাথগঞ্জের প্রায় ত্রিশটি গ্রাম।

উপায়ান্তর না দেখে স্থানীয় কয়েকজন ইটভাটা মালিকদের কাছে যান গ্রামের বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা মফেজ শেখ বলেন, ‘‘তাঁরা বিনামূল্যে ইটভাটা থেকে ভাঙা ইট দিতে রাজি হন। শুধু তাই নয়, গাড়ি করে সেই ইট পৌঁছে দেন নদীর পাড়ে।’’ সকলে হাত লাগান। দিন দুয়েকের মধ্যেই জুড়ে যায় সড়ক পথ।

ইদে নতুন সড়ক পেয়ে গোটা গ্রাম জুড়ে খুশির হাওয়া। বাজলু শেখ বলেন, “ইচ্ছে আর উদ্যোগ থাকলেই সব কিছু সম্ভব। এ রকম উদ্যোগ যদি সরকারি পর্যায়ে থাকত তবে এলাকার মানুষকে এত কষ্ট পেতে হত না।”

জঙ্গিপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সম্পাদক কৃষ্ণকুমার মুন্দ্রা বলেন, “নদীর ধস বোজাতে ভাঙা ইট চেয়েছিল গ্রামের বাসিন্দারা। প্রতিটি ভাটায় এ রকম ইট পড়ে থাকে। সেগুলি যদি মানুষের ভাল কাজে লাগে লাগুক।’’

গ্রামের বাসিন্দারা পঞ্চায়েতের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন, যতদিন না ধস সারানো হচ্ছে ততদিনের জন্য একটি ব্যারিকেডের গড়ে দেওয়া হোক। অন্তত পায়ে হেঁটে যাতে ওই অংশটুকু পার হওয়া যায়। রাতের জন্য লাগানো হোক আলো। মেলেনি কোনওটাই। ফলে গত ছয় মাসে একের পর দুর্ঘটনায় কারও পা ভেঙেছে, কারও বা হাত। অন্ধকারে রাস্তা দেখতে না পেয়ে নীচে আছড়ে পড়েছে মোটরবাইক, টোটো।

রানিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান অসিত দাস অবশ্য বলেন, “ওই সড়ক দিয়ে কয়েকশো যানবাহন চলে। তাতেই মাঝে মধ্যেই ধস নামে। তবে পঞ্চায়েতের পক্ষে রাস্তাটি সারানো সম্ভব ছিল না। গ্রামের মানুষ ধস বুজিয়ে রাস্তাটি আপাতত সারিয়েছেন।”

রঘুনাথগঞ্জ ডিভিশনের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেচ দফতর থেকে ওই এলাকার ৪০ মিটার গভীরে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। সেই মতো ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প রচনা করে রাজ্য সেচ দফতরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ অর্থ না মেলায় কাজ শুরু করা যায়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন