শর্ত ছাড়াই জমি দান

মাথায় ছাদ পেল খুদেরা

তবে কাজটা অবশ্য খুব সহজে হাসিল হয়নি। প্রশাসন এলাকার বাসিন্দাদের বুঝিয়ে জমি দানে রাজি করিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের এমন সাফল্য ভাবাচ্ছে নদিয়া প্রশাসনের কর্তাদেরও। তাঁরাও সেই পথে জমি জোগাড়ের চেষ্টা শুরু করেছে।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

জমি নেই। জমি না থাকলে বাড়ি হবে কোথায়? তাই বাড়ি করা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবে খোলা আকাশের নীচে বসে পড়তে হয় কচি-কাঁচাদের। কেউ তাঁর বাড়ি ব্যবহার করতে দিলে সেখানেই চলে রান্নাবান্না। খোলা আকাশের নীচেই খেতে বসে শিশুরা।

Advertisement

নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলার বেশির ভাগ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ছবিটা এই রকমই। সেই ছবিটা কিন্তু কিছুটা হলেও এ বার বদলাতে শুরু করেছে মুর্শিদাবাদে। জমি দিতে এগিয়ে এসেছেন আড়াইশো বাসিন্দা। সেই জমিতে তৈরি হবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র।

তবে কাজটা অবশ্য খুব সহজে হাসিল হয়নি। প্রশাসন এলাকার বাসিন্দাদের বুঝিয়ে জমি দানে রাজি করিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের এমন সাফল্য ভাবাচ্ছে নদিয়া প্রশাসনের কর্তাদেরও। তাঁরাও সেই পথে জমি জোগাড়ের চেষ্টা শুরু করেছে।

Advertisement

তবে এই কাজে পথিকৃৎ কিন্তু নদিয়ার হরিণঘাটা প়ঞ্চায়েত সমিতি। তাঁরা বাসিন্দাদের কাছ থেকেই জমি জোগাড় করে ফেলেছে বেশিরভাগ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের। জমি দানের বিনিময়ে প্রাপ্তিও রয়েছে জমির মালিকদের। জমির বিনিময়ে সেই অঙ্গনওয়াড়ির নামকরণ করা হবে তাঁর পরিবারের প্রয়াত সদস্যর নামে। এখন একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে চাইছে নদিয়া জেলা প্রশাসনও।

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন জানান, “অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য সব জায়গায় জমি না থাকায় আমরা জেলার বাসিন্দাদের কাছে জমি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনে প্রায় ২৫০ জন সাড়া দিয়েছেন। জমি দানের কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।”

মুর্শিদাবাদে ৮৬৬১ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। ৩৭০০ কেন্দ্রের নিজস্ব বাড়ি। বাকিগুলি কোথাও সরকারি বাড়িতে, কারও বাড়ির বারান্দায়, কোথাওবা ক্লাবঘরে চলছে। খাতায়- কলমে সেগুলি কোনও না, কোনও বাড়িতে চললেও, অনেক কেন্দ্র খোলা আকাশের নীচে চলে। এ পরিস্থিতিতে জেলাশাসক পি উলগানাথন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগী হন। নিয়ম মতো সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বাড়ি তৈরি করে দেয়। কিন্তু জমি কেনার অর্থ তারা দেয় না। এ বছরে প্রায় দুই হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বাড়ি করার পরিকল্পনা হয়েছে। জেলাশাসকের নির্দেশে জমির খোঁজ শুরু করেন ব্লক কর্তারা। যেখানে খোলা আকাশের নীচে কেন্দ্র রয়েছে, সেই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন প্রশাসনের কর্তারা। তাতেই কাজ হয়।

এ ছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়, থেকে শুরু করে উচ্চ বিদ্যালয়, এসএসকে-এমএসকের পড়ে থাকা জমি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গড়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি জমি ও দান করা মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার কেন্দ্রের জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।

অন্য দিকে নদিয়ায় ৬৬২০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। তাঁর মধ্যে মাত্র ১৮৮২টির নিজস্ব বাড়ি আছে। ২০০২টি অন্য সরকারি ভবনে চলে। আরও ২২৯২টি কারও বাড়ির বারান্দায়, ক্লাব ঘরের বারান্দায় চলে। মাস খানেক আগেই নওদার তোকিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার, কানপুর গ্রামের সৌমেন বিশ্বাস আড়াই শতক করে জমি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য নিঃশর্তে দান করেছেন।

নদিয়া জেলাপরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এত দিন ধরে বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র খোলা আকাশের নীচে চলছিল। আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে প্রস্তাব দিই যে, কেউ জমি দান করলে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি তাঁর পরিবারের প্রয়াত কোনও সদস্যের নামে করা হবে। এই প্রস্তাবের পরে কার্যত জমি দাতাদের লাইন পড়ে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন