পর্যটনে ভিড়ের ছায়া। — ফাইল চিত্র
দুয়ারে কড়া নাড়ছে বড়দিন, নতুন বছর। পিকনিকের সেরা সময় তো এটাই। কিন্তু সেই পিকনিক উৎসবেও কি থাবা বসাবে নোটের ঘাটতি?
এই আশঙ্কাকে মিথ্যে প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে জঙ্গিপুর, নবদ্বীপ। শীতের শুরুতেই নতুন সাজে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে জঙ্গিপুরের সবুজ দ্বীপে। বসেছে টয় ট্রেন। শীতের দুপুরে মিঠে রোদে গা এলিয়ে একটু নৌকোতে ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছে? থাকছে সে ব্যবস্থাও। কয়েক হাজার গাছের পরিচর্যা চলছে অত্যন্ত যত্ন সহকারে। বাগানে ফুটে রয়েছে রংবেরঙের গোলাপ। শিশুদের অপেক্ষায় আছে বিনোদন পার্কও।
এত সব আয়োজনের উদ্দেশ্য একটাই— মুর্শিদাবাদের অন্যতম সেরা পিকনিক স্পট, সবুজ দ্বীপে লোক টানা। একই কারণে ভোগের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে নবদ্বীপ-মায়াপুরের বেশ কয়েকটি মঠ-মন্দির। নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের সম্পাদক অদ্বৈত দাস বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা ভোগের দাম বাড়াচ্ছি না। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেটা নিয়ে ভাবা যাবে।’’
গত ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের পর থেকে সারা দেশ নানা সমস্যায় ভুগছে। বিয়ে পিছিয়ে যাওয়া থেকে মেনুতে আপস, বিনিময় প্রথা থেকে কাজ না পেয়ে ঘরে ফেরা, পর্যটন থেকে স্থানীয় ব্যবসার মুখ থুবড়ে পড়া—তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। আর সেই কারণেই পিকনিকের মরসুমটা অন্তত যাতে দুগ্গা দুগ্গা বলে পার করে দেওয়া যায় তার চেষ্টা চলছে।
ভাগীরথীর বুকে জেগে ওঠা ৬৪ একর চরের জমিতে জঙ্গিপুরের সবুজ দ্বীপ গড়ে ওঠে ১৯৯৮ সালে। জঙ্গিপুর পুরসভা নিয়ন্ত্রিত এই দ্বীপকে সাজিয়ে তুলতে জেলা পরিষদ ও পুরসভা প্রায় কোটি টাকা খরচ করেছে ইতিমধ্যেই। তবুও পিকনিকের মরসুম ছাড়া সে ভাবে লোকজনকে দ্বীপে টেনে আনা যায়নি। এ বার তাই আমরুট প্রকল্পে নতুন করে আবার সাজিয়ে তোলা হচ্ছে ওই দ্বীপ।
সদ্য সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “এমনিতেই নোট বাতিলের জেরে লোকজনের অবস্থা কাহিল। ইচ্ছে থাকলেও দূরে কোথাও যেতে পারছে না। তাই কম খরচে লোকজন যাতে এখানে আসতে পারেন তার জন্য সবরকম চেষ্টা চলছে। সেই কারণে প্রবেশমূল্য থেকে অন্য কোনও ফি এ বছর বাড়ানো হয়নি।”
নবদ্বীপ ও মায়াপুরের কোনও মঠ-মন্দিরে ঢুকতে অবশ্য প্রবেশমূল্য লাগে না। তবু নোট বাতিলের পরে ওই দুই শহরে পর্যটকের সংখ্যা কমে গিয়েছে। মঠ-মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, সামনে বড়দিন, নতুন বছরে ভালই ভিড় হবে। সেই ভিড়ের অপেক্ষায় দিন গুনছেন হতাশ ব্যবসায়ীরাও।