খুচরো দাদার প্রবেশ অবাধ

সোমবার ঠিক প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে হাসপাতালে ঢোকার জন্য কাকুতি-মিনতি করছিলেন বছর পঞ্চাশের এক বৃদ্ধা।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০৫:১৮
Share:

হাসপাতালের নিরাপত্তার হাল বেহাল রানাঘাটে।

মহকুমা হাসপাতালের মূল প্রবেশ পথের ডান দিকে ফাঁকা জায়গায় মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন জনা দশেক যুবক। তাঁদের আসতে দেখে রক্ষীরা বিনা বাক্যবায়ে দরজা খুলে দিলেন। তাঁরা গটগট করে জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে গেলেন।

Advertisement

অথচ, সোমবার ঠিক ওই সময়েই প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে হাসপাতালে ঢোকার জন্য কাকুতি-মিনতি করছিলেন বছর পঞ্চাশের এক বৃদ্ধা। রক্ষীরা তাঁকে কোনও মতেই ভেতরে যেতে দিতে রাজি নন। তা হলে কেন ওই যুবকেরা ঢুকতে পারল তা প্রশ্ন করলেন ক্ষুব্ধ বৃদ্ধা। রক্ষীরা উত্তর দিলেন, “ওঁরা কারা জানেন? নেতা। ওঁদের আটকালে আমি বিপদে পড়ব। এখানে কাজ করতে পারব না।”

এই হল রানাঘাটের প্রধান হাসপাতালের নিরাপত্তার অবস্থা। গত সপ্তাহে হাসপাতালে নিরাপত্তা চেয়ে দেশ কাঁপানো আন্দোলন করেছিলেন কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের জুনিয়ার ডাক্তারেরা। তার পর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নো বৈঠকের পরে সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তার একগুচ্ছ পরিকল্পনা রচিত হয়েছিল। তার পরেও রানাঘাটে এই চিত্র দেখে প্রশ্ন জাগল— এ ভাবে তো যে কোনও সময় এক দল মারমুখী লোক হাসপাতালে ঢুকে পড়তে পারে। তা বলে অবস্থা বদলালো কোথায়?

Advertisement

বেসরকারি সংস্থা থেকে নিযুক্ত রক্ষীরা জানালেন, এখানে স্থানীয় নেতা, মস্তানদের জন্য কোনও নিয়ম নেই। তারা যখন খুশি হাসপাতালে ঢুকতে-বেরোতে পারে। আর সাধারণ মানুষকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতেলের এক চিকিৎসক বলেন, “এখনও রোগীর সঙ্গে এক দঙ্গল লোক জরুরি বিভাগে প্রবেশ করেন। হুমকি দেন। গেটে তাদের আটকানো হয় না।’’ গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন থাকে না।

হাসপাতালের সুপার সুদীপ কান্তি সরকার বলেন, ‘‘এত দিন হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ বলে কিছু ছিল না। এখন ঠিক হয়েছে, দু’জন করে সিভিক ভলান্টিয়ার স্থায়ীভাবে হাসপাতালে থাকবেন। হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ টহল দেবে।” কিন্তু সে রকম কিছু তো দেখা গেল না? সুপার জানালেন, আরও কিছু দিন সময় লাগবে। রানাঘাট শহরের কোটমোড় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে পায়রাডাঙ্গার দিকে যেতে রাজ্য সড়কের ডান দিকে আনুলিয়ায় অবস্থিত রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল। এখানে প্রবেশের দুটি পথ রয়েছে। রক্ষী সব গেটেই থাকেন, কিন্তু এলাকার দাদাদের প্রবেশ অবাধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন