Pathasree

পথশ্রীর পথ নির্বাচনে প্রশ্ন

১ থেকে ১৫ অক্টোবর রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে পথশ্রী প্রকল্পে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০২:০১
Share:

প্রতীকী ছবি

গান ধরেছেন বাউল শিল্পী আশালতা সরকার, ‘‘শুনুন শুনুন জনগণ, আপনাদের সুবিধের জন্য সরকার গড়ছেন পথশ্রীর উন্নয়ন।’’ পাশের গ্রামে তখন বসেছে কবিগানের আসর। গান ধরেছেন কবিয়াল দুলালী চিত্রকরও, ‘‘শুরু হোক এক সাথে এক পথে মেলা, প্রতিটি সকাল হোক পথশ্রীতে চলা।..’’ অথচ তাঁদের গ্রামের পথই আজো শ্রীহীন।

Advertisement

শুধু তাঁদের গ্রামের রাস্তাই নয়। জেলার অনেক রাস্তারই এই অবস্থা। ১ থেকে ১৫ অক্টোবর রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে পথশ্রী প্রকল্পে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ। রাজ্য জুড়ে তার প্রচারে সরকারের পক্ষে শামিল হয়েছেন গ্রামগঞ্জের শিল্পীরাও। আশালতা ও দুলালীরাও তাঁদেরই দু’জন। দুলালী বলছেন, ‘‘পথশ্রীর জন্য গান গাইছি বটে কিন্তু জানি এর সবটা সত্যি নয়। নিজের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা ৩০ বছর পরে আজও কাদায় ভরা।’’ আশালতা বলছেন, ‘‘পথশ্রীতে যুক্ত হচ্ছে সেই সব রাস্তা যে রাস্তায় নেতাদের আনাগোনা। কিন্তু আমরা শিল্পী মাত্র। গান গাইছি দু’টো পয়সা পাব বলে। কিন্তু যখনই আসরে নামি, মনে পড়ে গণকরে বাবার বাড়ির কাদা ভরা রাস্তার কথা। বহু রাস্তার এই অবস্থা।’’

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, পথশ্রীর রাস্তা কারা কী ভাবে নির্বাচন করেছেন? তাঁরা কেন ঠিক মতো যাচাই করে নির্বাচন করেননি?’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক সুদীপ্ত পোড়েল (জেলা পরিষদ) বলেন, ‘‘রাজ্য মুর্শিদাবাদের ৭৩টি রাস্তার নাম পাঠিয়েছে, সেটা মোট ৮০ কিলোমিটার। এ ছাড়া, ১৪০০টা রাস্তা, যা মোট ৬৮০ কিলোমিটার, জেলা প্রশাসন পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের সব স্তরে কথা বলে স্থির হয়েছে। এই রাস্তাগুলোর সংস্কার বিভিন্ন স্তরে আটকে ছিল।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘জেলার বাস্তব চিত্র হল, খুবই বেহাল অবস্থায় আছে এমন রাস্তা, সেগুলিকে পথশ্রী প্রকল্পে আশা উচিত ছিল কিন্তু আনা হয় নি।’’

Advertisement

রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের গণকর গ্রামের আদিবাসী পাড়ার রাস্তার বেহাল অবস্থার কথা জানিয়ে বহু বার আবেদন করেছিলেন পঞ্চায়েতের কাছে। খোদ নবান্নয় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও চিঠি দিয়েছেন। ভেবেছিলেন, এ বার হয়ত পথশ্রীতে যুক্ত হয়ে যাবে রাস্তাটি। হয়নি। দুলালী জানান, আদিবাসী পাড়ায় প্রায় সাড়ে পাঁচশো মানুষের বাস। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই রাস্তা। ১৯৮৩ সালে মোরাম দিয়ে শেষ বার তৈরি হয়েছিল সে রাস্তা। তাও তৎকালীন এক বাম সাংসদ তহবিলের টাকায়। তারপর ৩৭ বছর হাত পড়েনি ৩ মিটার চওড়া ৮০০ মিটার লম্বা সে রাস্তায়। গ্রামেরই রবীন্দ্র গ্রন্থাগারের কার্যকরী সমিতির সদস্য ধ্রুবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘রাস্তা যে এত খারাপ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না।’’ আদিবাসী বিমল মার্ডি বলছেন ‘‘আমার ছোট বয়স থেকেই দেখছি রাস্তার এই বেহাল দশা।’’

৩০ বছর ধরে ৮০০ মিটার রাস্তা গড়তে এত গড়িমসি কেন? মির্জাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান টুকটুকি মাল বলছেন, ‘‘জানি রাস্তাটি খারাপ। কিন্তু এবারের পথশ্রীতে সে রাস্তা রাখা যায়নি। খুব তাড়াতাড়ি সেটা সংস্কার করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন