রাস্তায় উঠে এসেছে দোকান। —নিজস্ব চিত্র
ফুটপাথ তো বটেই, এমনকী রাজ্য সড়কেও উঠে এসেছে দোকান। আর বেশিরভাগ দোকানই ইটে গাঁথা। অর্থাৎ একেবারে স্থায়ী দোকান। তাছাড়াও সকালে নিয়মিত লিচু, আম শসা ছাড়াও সব্জি নিয়ে বসেন এলাকার ব্যবসায়ীরাও। ওই ব্যবসায়ীদের বসার জায়গা একেবারে রাজ্য সড়কের গা ঘেঁষে। এতেই ইসলামপুরে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
গত এক মাসে ওই এক মহিলা বাসযাত্রীর হাত কাটা পড়ে। রবিবার মৃত্যু হয়েছে উম্মর শেখ নামের এক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধের। স্থানীয় মানুষের দাবি, রাস্তা দখলে ব্যবসা চলছে। ফলে লোকজনের হাঁটার জায়গা বলতে কিছুই নেই। আর এতেই ঘন ঘন এত দুর্ঘটনা। পুলিশ মাঝেমধ্যে হকার উচ্ছেদ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ করলেও তা স্থায়ী হয় না। দিনকয়েক পরে আবার সেই পুরনো অবস্থায় ফিরে আসে বাসস্ট্যান্ড-সহ বাজারের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
পুলিশ জানিয়েছে, এ নিয়ে দু’বার অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অবৈধ নির্মান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দিন কয়েক পরে আবারও সেই আগের অবস্থায় ফিরছে ইসলামপুর। রানিনগর-১ ব্লকের বিডিও গোবিন্দ নন্দী বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই ওই সমস্যা নিয়ে এক দফা বৈঠক করেছি। আবারও সকলকে নিয়ে আলোচনা করে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা হবে।’’
রাজনৈতিক দলগুলি অবৈধ হকার উচ্ছেদের পক্ষে মুখ খুলছে। কিন্তু তলে তলে তারা হকারদের পাশেই দাঁড়ায়। এমনটাই অভিযোগ এলাকার লোকজনের। রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের কর্মীদের কর্মসংস্থানের জন্য পথ দখলকে সমর্থন করে। এক পুলিশ কর্তার দাবি, নেতারা বৈঠকে এসে রাস্তা সাফ করতে হবে বলে বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু পরে তাঁরাই বাঁধা দেন। অনেক দলই ফুটপাথে দলীয় কার্যালয় তৈরি করেছে।
আদতে এই সমস্যার মূল লুকিয়ে আছে রাজনীতির অন্দরে। পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের অভিযোগের তির কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলগুলির দিকেই। তাঁদের দাবি, দলগুলির মদতেই এ ভাবে দিনে রাতে অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে। হাট বসছে খোদ রাজপথে। তবে তাঁদের আরও দাবি, পুলিশ ও প্রশাসন আর একটু কড়া হলে বিষয়টি কমতে পারে।
ইসলামপুর ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সভাপতি শঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘ইসলামপুরের এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এই চত্বরে লিচু ও আম ছাড়াও সব্জি চাষ হয়। স্থায়ী কোনও বাজার না থাকার ফলে রাস্তায় এসে লোকজন তা বেচেন। আর তাতেই রাজ্য সড়কে যানজট দেখা দেয়। আমরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।’’ ইসলামপুরের কংগ্রেস নেতা নারায়ণ দাস বলেন, ‘‘কেবল সাধারণ গরীব মানুষ নয়, সমাজের প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ী সমিতির লোকেরা সরকারি জমি দখল করে রাস্তায় অবৈধ নির্মাণ করছেন। পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা সব সময় পাশে থাকব।’’ একই সুর বাম ও শাসক তৃণমূলের গলাতেও। রানিনগর ব্লক তৃণমূল সভাপতি আমিনুল হাসান ওরফে বাপি বলেন, ‘‘আমরা চাই ইসলামপুর বাসষ্ট্যাণ্ড পরিষ্কার থাকুক। অবৈধ নির্মাণ না সরালে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ ও প্রশাসনের পাশে আমরা থাকব।’’ এখন দেখার রাজনৈতিক দলগুলি প্রশাস না হকারের পাশে থাকে।