আমের দাম নিয়ে গণ্ডগোল। তার জেরে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল দু’জনকে। ২০১০ সালের ঘটনা। সেই মামলায় মঙ্গলবার ছ’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল রানাঘাট মহকুমা আদালত।
সাজাপ্রাপ্তদের নাম বুদ্ধদেব হালদার, তোতন মিত্র, খোকন হালদার, শঙ্কর হালদার, দীপঙ্কর হালদার এবং বিকাশ হালদার। ২০১০ সালে হাঁসখালি থানার কাকমারি গ্রামের বাসিন্দা ভীমপদ ঘোষ (১৮) এবং বিদ্যুৎ মণ্ডল (৩৫) খুন হন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকমারি গ্রামেরই একটি আম বাগান ইজারা নিয়েছিলেন বিদ্যুৎ মণ্ডল এবং বুদ্ধদেব হালদার। বাগানের আম কত দামে বিক্রি হবে, তা নিয়ে দু’জনের গণ্ডগোল শুরু হয়। দাম নিয়ে মতবিরোধের জেরে বাগানের আম বিক্রি করা যায়নি।
২০১০ সালের ১২ জুন দুপুরে দু’জনের মধ্যে তুমুল গণ্ডগোল হয়। তার পরেই বাগান ছেড়ে চলে যায় বুদ্ধদেব। রাতে বাগান পাহাড়ায় বিদ্যুতের সঙ্গে ভীমপদ এবং গ্রামেরই আরও দু’জন ছিলেন।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী নব্যেন্দু বিশ্বাস জানিয়েছেন, সেই রাতেই পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে বাগানে চড়াও হয় বুদ্ধদেব। ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁরা আচমকা চারজনের উপর হামলা করে। কোনও মতে ছুটে পালিয়ে যান দু’জন। বিদ্যুৎ এবং ভীমপদ পালাতে পারেননি। ছ’জন মিলে বিদ্যুৎ এবং ভীমপদকে কোপাতে থাকে। জখম অবস্থায় পালানোর চেষ্টা করেছিল ভীমপদ। বাগান থেকে তিনি বেরিয়েও পড়েন। কিন্তু, ছুটে তাঁকে ধরে ফেলে বুদ্ধদেবরা। ফের বাগানে টেনে এনে তাঁকে কোপায় । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু’জনের।
যে দু’জন বাগান থেকে পালাতে পেরেছিলেন, তাঁরা গিয়ে গ্রামে খবর দেন। ছুটে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু, ততক্ষণে সব শেষ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। প্রথম থেকেই বুদ্ধদেবের নাম ছিল অভিযুক্তের তালিকায়। ঘটনার পরই সে বেপাত্তা হয়ে যায়।
বেশ কিছুদিন পরে পুলিশ প্রথমে বুদ্ধদেবকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে জানা যায়, সে খুন করার জন্যই গ্রামেরই পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। জেরায় সে পুলিশের কাছে বাকি ছ’জনের নামও জানায়। কিন্তু, বুদ্ধদেব গ্রেফতার হওয়ার পর বাকি অভিযুক্তরা গা ঢাকা দেয়। পরে অবশ্য সকলেই গ্রেফতার হয়।
রানাঘাট আদালতের বিচারক জয়তী ভট্টাচার্য দাস সোমবার ছয় অভিযুক্তকেই দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। মঙ্গলবার ছ’জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ছ’জনকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক বছর কারদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।