এখানে রাখা ছিল খুনির বাইক। নিজস্ব চিত্র
কার্তিক খুনের খবর পেয়ে বাড়ির নীচে নেমে এসেছিলেন চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাসের বৃদ্ধ বাবা। নেমে আসেন চিকিৎসকের বড় ছেলে অনুপম ও ছোট বৌমা মৌ-ও। তাঁরা দু’জনেই গিয়ে খবর দিয়েছিলেন কাছেই কার্তিক বিশ্বাসের বাড়িতে। কিন্তু প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, সেই সময়ে ধারে-কাছে দেখা যায়নি চিকিৎসকের ছোট ছেলে অর্ঘ্য ওরফে বাপনকে। আর তা নিয়েই পাড়ায় নানা জল্পনা চলছে।
কৃষ্ণনগরের চুনুরিপাড়া লেনে চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাসের বাড়ির সামনে রাস্তার ঠিক উল্টো দিকে বাড়ি বিজন ভট্টাচার্যের। তিনি জানান, টিভিতে খেলা দেখতে-দেখতে গুলির চার-পাঁচটা শব্দ শুনে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু রাস্তায় কাউকে দেখতে না-পেয়ে আবার ঘরে ঢুকে যান। শুক্রবার তিনি বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম পটকা ফাটছে। পরে উপর থেকে দাদা নেমে এসে বিষয়টা জানানোর পরে গিয়ে দেখি, কার্তিকের মৃতদেহ পড়ে আছে।”
বিজনের বিস্ময়, “ডাক্তারবাবুর বৃদ্ধ বাবা, ছোট বৌমা, বড় ছেলেকে দেখলাম। কিন্তু ছোট ছেলেকে এক মুহূর্তের জন্য দেখতে পেলাম না!” একই কথা বলছেন পাশের বাড়ির মালিক স্বপন মেহেরাও। তাঁর কথায়, “ওই খুনের পরে ওঁদের বাড়িতে গিয়ে এক মাত্র ছোট ছেলেকেই দেখতে পাইনি। অবাকই হয়েছিলাম।”
স্থানীয় বাসিন্দা তথা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপন সাহা বলছেন, “এটা কি খুব স্বাভাবিক ঘটনা? বাড়িতে একটা খুন হয়ে গেল! বৃদ্ধ মানুষটাও নেমে এলেন নীচে। আর এক জন যেন বেমালুম হাওয়া হয়ে গেল?” তাঁর প্রশ্ন, “ছোট ছেলে কি ওই সময়ে বাড়িতে ছিল? না থাকলে সে কোথায় ছিল অত রাতে? আর যদি সে বাড়িতে থেকেই থাকে, এক বারের জন্যও তাঁকে মৃতদেহের ধারে-কাছে দেখা গেল না কেন?”
২৫ সেপ্টেম্বর রাতে চিকিৎসকের সঙ্গী কার্তিক আততায়ীর গুলিতে খুন হওয়ার পরেই বাপনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল পুলিশ। পরে তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ঘটনায় তাঁর যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলেনি। কার্তিকের স্ত্রী সাবিত্রী কিন্তু বলছেন, “আমরা তো প্রথম থেকেই বলে আসছি, ছোট ছেলের ভুমিকা স্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু সে কথা কে শোনে?” এ প্রসঙ্গে কুমুদরঞ্জন শুধু বলেন, ‘‘মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি বা আমার পরিবারের কেউই এই নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’
বৃহস্পতিবার গাড়ি-চালক দেবব্রত বিশ্বাস ওরফে গোবিন্দ দাবি করেন, তিনি ঘটনাস্থলে কোনও মোটরবাইক দেখতে পাননি। অথচ শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে বাইকেই চিকিৎসকের গাড়ি ধাওয়া করতে দেখা গিয়েছিল খুনিকে। কুমুদরঞ্জনের প্রতিবেশী স্বপন মেহেরা এ দিন দাবি করেন, তাঁদের শোওয়ার ঘরের জানালার নীচে গলির ভিতরে রাস্তার দিকে মুখ করে একটা মোটরবাইক দাঁড় করানো ছিল। গুলির শব্দ শুনে তিনি বিছানা ছেড়ে উঠেছিলেন। তাঁর দাবি, “সামান্য পরেই জানালার নীচে মোটরবাইকের শব্দ শুনে উঁকি মেরে দেখি, বাইক চালিয়ে এক জন চলে যাচ্ছে। মাথায় লাল হেলমেট। আর মোটরবাইকটা ছিল নীল রঙের।” বাইকটা প্রথমে চুনুরিপাড়ার দিকে যেতে গিয়েও নলুয়াপাড়ার দিকে চলে যায় বলে তিনি জানান।
পুলিশ এখনও দুই ধৃতকে নিজের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আততায়ীকে ধরতে পারেনি।