ভুবন জুড়ে পাতা অন্তর্জালের ‘ফাঁদ’!
কে শিকার, আর কে শিকারি বুঝতে বুঝতেই ‘উইন্ডো’-য় কড়া নাড়ে বিপদ।
আর সেই কারণেই অন্তর্জালের ‘অ, আ, ক, খ’ চেনাতে এ বার রীতিমতো ক্লাস শুরু করেছেন নদিয়া-মুর্শিদাবাদের পুলিশ কর্তারা।
দিনকয়েক আগে কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে শিক্ষকের ভূমিকায় দেখা গেল নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়াকে। সেখানে অন্য কলেজের পড়ুয়া ও অধ্যক্ষও ছিলেন। প্রথমে পড়ুয়াদের মধ্যে কিঞ্চিৎ আড়ষ্টতা ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই গল্পে, আলোচনায় তাঁদের সহজ করে দিলেন শীষরাম। পড়ুয়া ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন তিনি।
ভিড় থেকে ছিটকে এল—‘স্যার, ধরুন আমি কোন কিছু শেয়ার বা লাইক করলাম না। কিন্তু কেউ আমার প্রোফাইলে বিতর্কিত কিছু ‘ট্যাগ’ করে দিল। তখন আমি কী করব?’
মাইকে অমায়িক ভাবে উত্তর দিলেন পুলিশ সুপার, ‘আপনাকে ট্যাগ করে আপনার কিছু হবে না। তবে আপনার কর্তব্য, বিষয়টি পুলিশকে জানানো।’
কথা শেষ হতেই উড়ে এল পরের প্রশ্ন—‘দেখা গেল, আমার ছবি ও অন্য তথ্য ব্যবহার করে আমার নামে কেউ ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে সেখান থেকে কেউ খারাপ কিছু পোস্ট করছে। তখন আমি কী করব?’ শীষরাম জানালেন, ‘‘এমনটা কিন্তু হচ্ছে। আর এটা হলেই সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান।’’
পরের প্রশ্নকর্তা খোদ কৃষ্ণনগরের দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের অধ্যক্ষ সাহাজাহান আলি। তিনি বলেন, “কলকাতা পুলিশ ‘বন্ধু’ নামে একটা অ্যাপ বের করেছে। যেখানে সরাসরি এই বিষয়গুলি নিয়ে অভিযোগ জানানো যায়। আমাদের জেলায় কি এমন কোনও পরিকল্পনা আছে?”
পুলিশ সুপারের উত্তর, ‘‘খুব ভাল প্রস্তাব। আমরাও এটা করব। তবে সময় লাগবে কিছু দিন। কলকাতা পুলিশের পক্ষে এটা করা সহজ। কারণ, ওদের পরিকাঠামো অনেক উন্নত। তবে আমরাও চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত এমন কিছু করা যায়।’’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) দিনেশ কুমার ও রানাঘাটের এসডিপিও আমনদীপকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে হাজির হয়েছিলেন পুলিশ সুপার। প্রথমে আমনদীপ প্রজেক্টারের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন, কী ভাবে সতর্কতার সঙ্গে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা উচিত। আর সেটা না করলে কী কী বিপদ হতে পারে।
তার পরেই রীতিমতো শিক্ষকের ভূমিকায় ‘ক্লাস’ শুরু করেন পুলিশ সুপার। তাঁর পরামর্শ, কোনও পোস্ট ‘লাইক’ বা ‘শেয়ার’ করার আগে ভাল করে পড়ুন। অনেকেই অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই কিছু ছবি বা লেখা পোস্ট করেন। ভুল করেও সেই ফাঁদে পা দেবেন না। আগামী দিনে সাইবার ক্রাইমের উপরে আরও কঠিন আইন আনতে চলেছে রাজ্য।
পিছিয়ে নেই মুর্শিদাবাদও। বরং সে জেলার পুলিশ এমন ‘ক্লাস’ শুরু করেছে সেই মার্চ থেকে। জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার ইতিমধ্যে বহরমপুরের গার্লস কলেজ, শ্রীগুরু পাঠশালা ও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে গিয়েও সচেতন করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) অংশুমান সাহাও লালগোলা মানিকচক হাই মাদ্রাসা, লালবাগ কলেজ ও স্থানীয় বেশ কয়েকটি স্কুলে গিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকলে অভিভাবকদেরও উচিত নজরদারি চালানো। ভুল করেও নিজের মোবাইল নম্বর, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ডের নম্বর শেয়ার করবেন না।’’
পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ার গুজবের ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই গুরুত্ব না বুঝে এমন সব লেখা, ছবি বা ভিডিও সত্যি বলে পোস্ট করছেন যা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আসলে সত্যি বলে যেটা ছড়ানো হচ্ছে সত্যি সত্যিই সেটা সত্যি নয়। বিপদটা এখানেই।
পুলিশের ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ুয়ারা বলছেন, ‘‘অনেক কিছু জানতে পারলাম। এ বার থেকে সতর্ক ভাবেই অন্তর্জালে ঘোরাফেরা করব।’’