প্রতিবন্ধকতা নিয়েই আশা-হতাশার কাহিনি

মাধ্যমিকেও ভরসা সেই মায়ের কোল

কপালের বিনবিনে ঘাম মুছে, বাড়ি ফিরতেন মুস্তারি। বেঁচে থাকার প্রতিটি ধাপ যাকে ফেলতে হয় অন্যের উপরে ভরসা করে, প্রথম বার বোর্ড পরীক্ষায় বসে সে কারও সাহায্য ছাড়াই দিব্যি তর তর করে লেখা শেষ করে বেরিয়ে এল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০২:১০
Share:

মুবাসসির। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

ছেলেকে কোলে নিয়ে ভাঙাচোরা রাস্তাটা দিয়ে হোঁচট খেতে খেতে স্কুলের সামনে পৌঁছলে চায়ের দোকান থেকে কেউ না কেউ ছুটে এসে মুস্তারি বানুর কোল থেকে ছেলেটিকে নিয়ে ক্লাসে পৌঁছে দিত।

Advertisement

কপালের বিনবিনে ঘাম মুছে, বাড়ি ফিরতেন মুস্তারি। বেঁচে থাকার প্রতিটি ধাপ যাকে ফেলতে হয় অন্যের উপরে ভরসা করে, প্রথম বার বোর্ড পরীক্ষায় বসে সে কারও সাহায্য ছাড়াই দিব্যি তর তর করে লেখা শেষ করে বেরিয়ে এল।

ইসলামপুরের নশিপুর হাইমাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মুবাসসির আলম বলছে, ‘‘মায়ের কোলে স্কুলে যেতে বড় অস্বস্তি হত। আজ পরীক্ষার পরে মনে হচ্ছে মায়ের জন্যই এত দূর আসতে পারলাম।’’

Advertisement

জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধকতা তার। কোনও ক্রমে হাতে কলম ধরতে পারলেও স্বাভাবিক ভাবে লিখতে পারে না সে। কিন্তু তার পরেও ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ক্লাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে থাকত সে।

নশিপুর হাই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘‘মুবাসসির আমাদের খুব প্রিয় ছাত্র। গোটা স্কুল ওকে এক ডাকে চেনে। হাজারও প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ও হারতে রাজি নয়।’’

মায়ের কোলে চেপে একই রুটিন মেনে পরীক্ষা দিল আরও এক জন, ডোমকলের শিবনগর গ্রামের দিনমজুর পরিবারের রবিউল ইসলাম।

মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষার পরে সে ছেলেটিও মনে করছে, ‘‘মা-ই আমার কাছে সব। তাঁর জন্যই পরীক্ষায় বসতে পারলাম।’’ রবিউলের মা নাসরিন বানুর দাবি, ‘‘ছেলেটা মাধ্যমিকে বসুক এত দিন এই প্রার্থনা করে এসেছি। আজ সত্যি সফল লাগছে।’’

বাড়ির কাছেই স্কুল, ফলে যাতায়াতে খুব অসুবিধে হয়নি তার। কিন্তু এ বার মাধ্যমিকে সিট পড়েছে অনেক দূরে। এ বার তাই পরীক্ষার জন্য সে ধার করেছিল পড়শির ঠেলা গাড়ি। সেই গাড়ি ঠেলেই মা তাকে নিয়ে গিয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রে। বাধা আছে পদে পদে। কিন্তু স্রেফ মনের জোরেই সেই বাধা ডিঙিয়ে জয়ের পথে হাঁটছে ওরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন