FICN

মুর্শিদাবাদের বদলে নদিয়া! জাল নোট পাচারের আরও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরির পথে পাচারকারীরা

মুর্শিদাবাদে এসটিএফের কড়া নজর এড়িয়ে জাল নোট পাচার ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছিল। সেই কারণেই মুর্শিদাবাদের বদলে নদিয়ার সীমান্তবর্তী বাজারগুলিকে ‘টার্গেট’ করছেন জাল নোট পাচারকারীরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:২৭
Share:

— প্রতীকী ছবি।

নতুন বছরে ছক বদল জাল নোট পাচারকারী চক্রের। এত দিন যে মুর্শিদাবাদকে জাল নোট পাচারের কেন্দ্রস্থল বলে জানা যেত, গোয়েন্দাদের নিরন্তর নজরদারির জেরে পাচারকারীদের সেই কেন্দ্র রাতারাতি বদলে গিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদ নয়, এখন নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন বাজারগুলিতে ঘাঁটি সরিয়ে এনেছেন পাচারকারীরা। ডিসেম্বর মাস জুড়ে নদিয়ায় যে হারে জাল নোট উদ্ধার হয়েছে এবং গ্রেফতারি হয়েছে, তাতে এ ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত পুলিশ।

Advertisement

কলকাতার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে মাল কিনতে সপ্তাহান্তে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিতে হয় অগ্রিম। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় মোট ত্রিশ হাজার টাকা নগদ জমা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন এক ব্যবসায়ী। তাঁর দেওয়া ষাটটি পাঁচশো টাকার নোটের মধ্যে দু’টি নোট জাল বলে জানান ক্যাশিয়ার। ব্যক্তিগত পরিচিতি এবং গ্রাহকের প্রতি ব্যাঙ্কের আস্থার কারণে নোট দু’টিকে বাতিল আর ওই ব্যবসায়ীকে স্রেফ সাবধান করে এ বারের মতো রেহাই দেয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন ব্যবসায়ী। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘটনাটি ঘটে নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন করিমপুরে। তবে এটা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বিগত বছরের ডিসেম্বরে নদিয়ার কল্যাণী-করিমপুরে বার বার ধরা পড়েছে জাল নোট। জাল নোট উদ্ধারের একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সক্রিয় হন রাজ্যের গোয়েন্দারা। তৎপরতা শুরু হয় রাজ্য এসটিএফে। রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের তৎপরতায় চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে পুলিশের। আর মুর্শিদাবাদ নয়, মালদার বৈষ্ণবনগর হয়ে ভারতীয় জাল নোট সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে নদিয়া জেলার তিনটি থানা এলাকায়, সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে। মুর্শিদাবাদে এসটিএফের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাচারকারীদের এই স্থান বদলের সিদ্ধান্ত বলে প্রাথমিক ভাবে দাবি করা হয়েছে। জাল নোট পাচারের ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন নদিয়ার বেশ কয়েক জন পাচারকারী। উদ্ধার রয়েছে বিপুল অঙ্কের জাল নোট। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নদিয়ার জাল নোট পাচারের নতুন মডিউল সম্পর্কে তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। স্বভাবতই আশঙ্কায় নদিয়ার ব্যবসায়ীরাও।

রাজ্য এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন বাজার দীর্ঘ দিন ধরেই এসটিএফের কড়া নজরদারির আওতায়। এর জেরে খুব একটা সুবিধা হচ্ছিল না জাল নোট পাচারকারীদের। তাই এ বার জায়গা বদল করে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে আর এক সীমান্তবর্তী জেলা নদিয়ায়। এ বারও তাঁদের লক্ষ্য জেলার সীমান্ত সংলগ্ন বাজারগুলি। মালদার বৈষ্ণবনগর থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার জাল নোট পৌঁছে যাচ্ছে নদিয়ায়। সেই নোট আসল নোটের সঙ্গে মিলিয়ে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে সুযোগ বুঝে। সদ্য শেষ হওয়া ডিসেম্বর মাসে বৈষ্ণবনগর থেকে নদিয়ায় জাল নোট নিয়ে আসতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে মোট চারটি পাচারকারী দল। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পরিমাণে জাল টাকা। শুধুমাত্র ডিসেম্বরেই গ্রেফতার হয়েছেন মোট ১৬ পাচারকারী।

Advertisement

বিএসএফ সূত্রে খবর, মালদহের দেবনাপুর সীমান্তের কাঁটাতারবিহীন এলাকা জালনোট পাচারের ‘হটস্পট’। বাংলাদেশে তৈরি হওয়া ভারতীয় জাল নোট কিংবা জাল নোট তৈরির উন্নত মানের কাঁচামাল নিয়ে পাচারকারীরা দেওনাপুর হয়ে ঢুকে পড়ছেন বৈষ্ণবনগরে। পুলিশের নজরদারিতে থাকা পাচারকারীদের বাদ দিয়ে নতুন নতুন লোক (ক্যারিয়ার) নিয়োগ করে জাল নোট পাচারের সমান্তরাল মডিউল তৈরি করে ফেলেছেন মালদার বৈষ্ণবনগরের পাচারকারীরা। নোট তো ঢুকল, কিন্তু তা চালানো হবে কী ভাবে? গোয়েন্দারা মনে করছেন, পুলিশের সন্দেহ এড়াতেই মুর্শিদাবাদের বদলে বেছে নেওয়া হয়েছে নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাজারগুলিকে। ছোট থেকে মাঝারি বাজারগুলিতে জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়াই পাচারকারীদের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গোয়েন্দারা।

জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায় বলেন, ‘‘বিগত বছরের শেষের দিকে জেলায় যে কয়েক জন জাল নোট পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই নদিয়ার বাসিন্দা। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাচার মডিউল সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গিয়েছে।’’ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের বিএসএফের ডিআইজি একে আর্য বলেন, ‘‘নদিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলিতে জাল নোট পাচারের চেষ্টা হচ্ছে। বিএসএফ অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে অবৈধ এবং বেআইনি কারবারকে নিয়মিত প্রতিহত করে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন