বনধ-চিত্র: বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
শাসক দলে পা বাড়িয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুচরেরা। হাতের মুঠোয় থাকা পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলিও খোয়া গিয়েছে। সদ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর দাপুটে নেতাদের অনেকেই বুথেও ঢুকতে পারেননি।
প্রদেশ সভাপতির খাসতালুকে কংগ্রেস বনধ ডাকলে তার সাড়া কতটা মিলবে, তা নিয়ে একটা চাপা ঔৎসুক্য ছিলই। সোমবার, তা দেখতে চেয়েছিল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও। সেই ডাকে দশে পাঁচ পেয়েছে তাঁর দল, এমনই মনে করছে একদা অধীর চৌধুরীর গড় বহরমপুর। বনধের সাফল্য মুখে নিজে বড়াই করে বললেও দলের মেজৃসেজ নেতাদের অনেকেই আড়ালে শ্বীকার করেছেন একশো ভাগ সাফল্য আসেনি। সরকারি হিসেব বলছে— অফিস কাছাড়ি, স্কুল-কলেজ সবই ছিল খোলা। হাজিরাও হয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ। জেলাশাসক পি উলগানাথন নিজেই বলছেন, ‘‘কর্মীদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগ হাজির ছিলেন।’’ তবে, জেলায় বেসরকারি বাসের অধিকাংশই এ দিন রাস্তায় না নামায় সাধারণ মানুষকে যে ভুগতে হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চলেনি ট্রেকার কিংবা অন্য যানবাহানও। মুর্শিদাবাদ জেলা বাস মালিকদের সংগঠনের কর্তা রথীন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও শতকরা ৩০ ভাগের বেশি বাস রাস্তায় নামাতে পারিনি।’’
অধীর মনে করছেন, মুর্শিদাবাদ তাঁকে আগের মতো তুষ্ট করতে না পারলেও, নিরাশও করেনি। স্কুল কলেজে শিক্ষক শিক্ষকা হাজির হলেও পড়ুয়াদের অধিকাংশই ছিল গরহাজির। ফলে জেলার প্রায় সব স্কুল কলেজেই এ দিন পঠন পাঠন হয়নি। এমনকি জঙ্গিপুরের মতো ‘সুপার স্পেশালিটি’ হাসপাতালের বহির্বিভাগে যেখানে হাজার রোগী ভিড় করেন, এ দিন ছিল মাত্র শ’খনেক। পুজোর মুখে অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। কাশিমবাজার ও বেলডাঙায় দু’টি ট্রেন অবরোধ করেন কংগ্রেস সমর্থকেরা। পুলিশ গিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। বহরমপুর পুলিশ ৯ জন বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করে। ডোমকলের বাঘডাঙায় সিপিএম-এর বনধ সমর্থকদের উপর তৃণমূলের কর্মীরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। ফলে প্রঅধীর চৌধুরী ও সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পেট্রোল ডিজেল- সহ প্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশ ছোঁয়া মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ডাকা বনধ বানচাল করলে পুলিশ নামিয়ে ক্ষান্ত থাকেনি বিজেপির বি-টিম তৃণমূল। বনধ ব্যর্থ করতে তাঁরা নিজেরাও এ দিন পথে নেমেছিল। তবুও সাধারণ মানুষ তাঁদের সেই চেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘নীতিগত কারণে কর্মনাশা বনধের পক্ষে থাকতে পারি না। তবে আমরাও বিজেপির জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে জেলার ২৬টি ব্লকে ও জেলার সব শহরে মিছিল করেছি।’’ কংগ্রেসের দলীয় বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে এ দিল সকালে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবরোধ করেন অধীর। জঙ্গিপুর সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় কংগ্রেস সমর্থকদের নিয়ে রঘুনাথগঞ্জে৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বসে অবরোধ করেন।