শান্তিপুর

বাড়িতেই জাল চক্র, ধৃত দুই ছাত্র

দোতলায় নিজের ঘরে ছেলে দিনরাত কম্পিউটারে মুখ গুঁজে থাকত। তার বন্ধুরাও মাঝেমধ্যেই হানা দিত সেখানে। রাত পর্যন্ত চলত গল্পগুজব।কলেজ পড়ুয়া ছেলেটির এ হেন চালচলনে কারও সন্দেহ হয়নি। যদিও বৃহস্পতিবার ঘটনায় চমকে গিয়েছেন পাড়াপ্রতিবেশীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৭
Share:

ধৃত অভিষেক ও সন্দীপ।

দোতলায় নিজের ঘরে ছেলে দিনরাত কম্পিউটারে মুখ গুঁজে থাকত। তার বন্ধুরাও মাঝেমধ্যেই হানা দিত সেখানে। রাত পর্যন্ত চলত গল্পগুজব।

Advertisement

কলেজ পড়ুয়া ছেলেটির এ হেন চালচলনে কারও সন্দেহ হয়নি। যদিও বৃহস্পতিবার ঘটনায় চমকে গিয়েছেন পাড়াপ্রতিবেশীরা। জাল ভোটার কার্ড তৈরির চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে শান্তিপুরের হাটখোলাপাড়ার বাসিন্দা অভিষেক ভট্টাচার্য ও তার এক বন্ধু দেশবন্ধু কলোনির সন্দীপ সরকারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। দু’জনেই শান্তিপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে আচমকাই অভিষেকের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। প্রথমে আটক করা হয় তাদের। সেই সঙ্গে তাদের ব্যবহৃত একটি কম্পিউটার সিজ করে নিয়ে আসে পুলিশ। এর পর দফায় দফায় তাদের জেরা করে উঠে আসে নানা তথ্য। পাশাপাশি কম্পিউটারের হার্ডডিক্স পরীক্ষা করে পুরোপুরি নিশ্চিত হয় পুলিশ। তার পর গভীর রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “ধৃতরা কী ভাবে এই কাজটা করত, আর কেউ জড়িত আছে কি না, সেটা জানতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Advertisement

কী ভাবে জাল ভোটার কার্ড তৈরি করত অভিষেকরা? প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, অভিষেকের বাড়িতেই তার কম্পিউটার ব্যবহার করে তৈরি করা হতো জাল ভোটার কার্ড। পুলিশ তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে চারটি জাল ভোটার কার্ড উদ্ধার করেছে। ভোটার কার্ডে মুখের ছবি বদলে দিয়েই তারা নিখুঁত ভাবে নকল কার্ড তৈরি করত। শুধু জাল ভোটার কার্ডই নয়, ধৃতরা জাল রেশন কার্ড, বিভিন্ন স্কুল ও বোর্ডের সার্টিফিকেট তৈরি করত বলেও জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের আরও অুনমান, এই চক্রের সঙ্গে আরও লোকজন জড়িত রয়েছে। তা ছাড়া যে ভাবে তারা এই জাল ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডের চক্র তৈরি করেছে, তাতে জেলার বাইরেও এর জাল ছড়িয়ে আছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা।

অভিষেকের কম্পিউটারের উপরে দখল বেশি থাকায় জাল করার “টেকনিক্যাল” বিষয়টি সে-ই দেখত বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ এ-ও জানতে পেরেছে, যে প্রায় এক বছর হল তারা এই কাজে হাত পাকিয়েছে। গোটা বিষযটিই হতো অত্যন্ত গোপনে। অভিষেকের বাড়ির দোতলার ঘরে। প্রতিবেশীরাও বিশেষ সন্দেহ করতে পারেনি। কলেজে পড়া একটা ছেলের কাছে তার বন্ধুবান্ধব আসবে, তারা রাত পর্যন্ত গল্প করবে, এটা তারা স্বাভাবিক ভাবেই দেখেছিল।

ধৃত সন্দীপ সরকারের বাবা বিনোদ সরকার পেশায় সব্জি বিক্রেতা। আর অভিষেকের বাবা অলোক ভট্টাচার্য একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। গোটা বিষয়টি চক্রান্ত বলেই দাবি করছেন ধৃতদের পরিবার। অভিষেকের বাবা অলোক ভট্টাচার্য বলেন, “চক্রান্ত করে আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। কোন ভাবেই সে এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।”

কিন্তু অভিষেকের কম্পিউটারের হার্ডডিক্স থেকে যে সব প্রমাণ মিলেছে, সেগুলো? অলোকবাবু বলেন, “হতে পারে কেউ তাকে ভুল বুঝিয়ে, এই সব কাজ করিয়ে নিয়েছে।” এ দিন অলোকবাবুই অবশ্য জানিয়েছেন, তার ছেলে কম্পিউটার নিয়ে থাকতে পছন্দ করত। শুধু তাই নয় বেলা এগারোটার পর থেকে তাঁর ছেলের কাছে বন্ধুবান্ধবরা আসত। দীর্ঘ সময় তারা উপরের ঘরে দরজা বন্ধ করে থাকতো। কিন্তু একবারও তাঁদের মনে তেমন কোন সন্দেহ তৈরি হয়নি।

গোটা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত পুলিশের বড়কর্তারা। তাঁদের কথায়, ‘‘এমনিতেই নদিয়া সীমান্ত এলাকা। তার উপরে অনুপ্রবেশের আশঙ্কাও প্রবল। এই পরিস্থিতিতে এদের তৈরি জাল কার্ড ঠিক কাদের হাতে পৌঁছে গিয়েছে, সেটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন