সচেতনতা প্রসারে শিক্ষকের লেখা গান ছাত্রদের। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির উঠোনে স্কুলের পোশাক পরা এক দল ছাত্র। তাদের কারও হাতে পোস্টার। কেউ বাড়িয়ে দিচ্ছে লিফলেট। মুখে গান, “চলো ভাই ডেঙ্গি মারতে আমরা সবাই নেমে পড়ি এক সাথে। চলো ভাই নোংরা জিনিস রাখবো না ভাই, ফেলব মোরা দূরস্থানে। জল জমতে দেব না ভাই টবে কিংবা ডাবের খোলে।’’
এ ভাবেই গান গেয়ে এলাকার মানুষকে ডেঙ্গি বা অন্যান্য মশা বাহিত রোগ সম্পর্কে সচেতন করছে নবদ্বীপ আর সি বি সারস্বত মন্দির স্কুলের পড়ুয়ারা। ওই স্কুলেরই শিক্ষক বৃন্দাবন মণ্ডলের উদ্যোগে তাঁরই লেখা এবং সুর করা গান গেয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ডেঙ্গি প্রতিরোধের অভিনব পরিকল্পনায় সাড়া পড়েছে স্কুল সংলগ্ন এলাকায়। নবদ্বীপ শহরের এক প্রান্তে পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের সীমানায় মাথাপুর রোডের ধারে অবস্থিত সারস্বত মন্দির (বয়েজ) শহরের নাম করা স্কুলগুলির একটি। লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে স্কুলটির ব্যতিক্রমী ভূমিকা আছে।
জাতীয় শিক্ষকের সম্মান পাওয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজনকুমার সাহা অবশ্য এ ব্যাপারে যাবতীয় কৃতিত্ব দিচ্ছেন সহকর্মী বৃন্দাবনকেই। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম, নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ একটু অন্য ভাবে পালন করব। সেই ভাবনারই ফসল এই গান এবং তা গেয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষকে সচেতন করা। পুরো বিষয়টি বৃন্দাবনবাবু করেছেন।”
আদতে করিমপুরের যমশেরপুরের বাসিন্দা বৃন্দাবন বলেন, ‘‘গত বছর আমার দাদা এবং বউদি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মনে হয়েছিল, একটু চেষ্টা করলেই এই রোগ ঠেকানো যায়। সেই ভাবনা থেকেই গানটি লিখেছিলাম। ভেবেছিলাম, সুরের মাধ্যমে বার্তা দিলে কেমন হয়।”
স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া শুভ শীল, সৈকত দেবনাথ, দশম শ্রেণির হিতাংশুপ্রসাদ চক্রবর্তী, অষ্টম শ্রেণির তন্ময় সরকার, শুভ দেবনাথ বা সপ্তম শ্রেণির গৌরব দাসেরা ‘স্যরে’র লেখা ও সুর দেওয়া গান শিখে নিয়েছে। শুভ বলে, ‘‘আমাদের স্কুলে নির্দিষ্ট দিনে সিসিআরটির ক্লাস হয়। সেখানেই নিয়মিত গান শিখেছি স্যারের কাছে। শিক্ষক দিবসেই প্রথম গানটি স্কুলে গাওয়া হয়।’’ কারও বাড়ি গিয়ে গান গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লিফলেটও বিলি করছে ছাত্রেরা। খুঁটিয়ে দেখছে, বাড়ির কোথাও জমা-জল, আবর্জনা আছে কি না। বাড়ির উঠোনে ছাত্রদের গান শুনে অন্য রকম লাগছে মানুষেরও।