Superstition

নিম ডালের শাসনে চলছে বিষ-ঝাড়া

হরিহরপাড়ার খলিলাবাদে সাপের বিষ ঝাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে বলে স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ব্যাপারে গ্রামের সচেতন মানুষ অন্ধ বিশ্বাসে ঘা দিতে গেলে পাল্টা আঘাত ফিরে আসছে।

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০৫:২৮
Share:

শ্রীপুর গ্রামে চলছে সর্পদষ্টের ‘চিকিৎসা’। নিজস্ব চিত্র

মাস কয়েক আগে ‘দইপড়া’র দাপট দেখেছিল মুর্শিদাবাদ। মাঝ-বর্ষায় ‘সাপে কাটা’ রোগীর সংখ্যা বাড়তে ফের অন্য চেহারায় ফিরে এল সেই সংস্কারের আঘাত।

Advertisement

হরিহরপাড়ার খলিলাবাদে সাপের বিষ ঝাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে বলে স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ব্যাপারে গ্রামের সচেতন মানুষ অন্ধ বিশ্বাসে ঘা দিতে গেলে পাল্টা আঘাত ফিরে আসছে। ফলে বুজরুকির জয়জয়াকার চলছে হরিহরপাড়ার শ্রীপুর গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে প্রায় প্রতি দিনই চলছে সাপে-কাটা রোগীদের বিষ নামানোর নিরন্তর বুজরুকি।

রাতে সেই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির পাশে বাঁশ বাগানে চেয়ারে বসে আচ্ছন্ন সর্পদষ্ট দুই রোগী। সামনে এক বালতি জল। ওঝার সাগরেদদের হাতে কাঁচা নিমের ডাল। ওস্তাদ উচ্চস্বরে, সুর করে গান গাইছেন, মন্ত্র আওড়াচ্ছেন। আর তার সাগরেদরা রোগীর চারপাশে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে, মন্ত্র আউড়ে জলে ভেজানো নিম ডাল রোগীর গায়ে ঠেকিয়ে সাপের বিষ নামাচ্ছেন। এভাবেই চলছে সাপে বিষ নামানোর বুজরুকি। আর, অন্ধবিশ্বাসে হরিহরপাড়া, নওদা, ডোমকলের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সাপে-কাটা রোগীদের হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে এসে ভিড় করছেন শ্রীপুরের ওঝাদের কাছে। আর সন্ধ্যা হতেই শুরু হয়ে যাচ্ছে মন্ত্র পড়ে সাপের বিষ নামানোর বুজরুকি।

Advertisement

ওঝাদের কথায়, সাপে কাটা রোগীদের পিঠে কাঁসার থালা বসিয়ে চলে বিষ নির্ণয়, তারপর বিষ না নামা পর্যন্ত গভীর রাত পর্যন্ত চলে ঝাড়ফুঁক। কাঁসার থালা শরীর থেকে খসে পড়লেই শেষ হয় বিষ নামানোর কাজ!

শনিবার দুপুরে পুকুরে স্নান করতে গিয়ে হরিহরপাড়ার গজনিপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর চব্বিশের যুবক সাবীর শেখকে সাপে কামড়ায়। একই দিনে বিকেলে শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর পয়তাল্লিশের মদিনা বিবিকেও সাপে কাটে। কেউই হাসপাতালে না গিয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন ওঝার।

শ্রীপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বর্ষায় সর্পদংশনের ঘটনা বেড়ে যায়। দূর দুরান্ত থেকে প্রায় প্রতি দিনই সাপে কামড়ানো রোগীদের এই ওঝাদের কাছে নিয়ে আসেন।’’ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দেশের ৮০ শতাংশ সাপ বিষ-হীন। সেই সব সর্পদষ্ট মানুষকে ‘সারিয়ে তুলে’ রোগীদের আস্থা অর্জন করছে ওঝারা। মন্ত্র পড়ে সাপের বিষ নামানো বুজরুকি ছাড়া কিছুই নয়।’’ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা কার্যকরী সভাপতি পুষ্পক পাল বলেন, ‘‘একবিংশ শতাব্দীতে এই ধরনের বুজরুকি চলতে পারে না। আমরা লাগাতার প্রচার করছি।’’

হরিহরপাড়ার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুল লস্কর বলেন, ‘‘মন্ত্র বা ঝাড়ফুঁক করে সাপে-কাটা রোগীদের বিষ নামানো বুজরুকি ছাড়া কিছুই না। সর্পদংশনের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রয়োগে একশো শতাংশ সারিয়ে তোলা সম্ভব।’’

কিন্তু ওঝাদের দাপটে সে সত্য ফিকে হয়ে গিয়েছে গ্রাম বাংলার আনাচকানাচে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন